পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

 দুই ঘটিকার সময় ত্রিবঙ্কুর-মহারাজের দেওয়ানের নিকট হইতে পত্র পাইলাম। তিনি লিখিয়াছেনঃ- আমার যাত্রাপথের ধারে, নৈজেতাবারে-নামক একটি গ্রামে, আমার ব্যবহারের জন্য একটি ঘোড়ার গাড়ী প্রস্তুত থাকিবে। সেখানে যাইতে হইলে, এখান হইতে ১১টা রাত্রে ছাড়িতে হইবে। কিন্তু আমি এখনি ছাড়িব বলিয়া স্থির করিলাম। আজ রাত্রেই সেইখানে গিয়া পৌঁছিব। সূর্য্যাস্তকাল পর্য্যন্ত অপেক্ষা করিয়া তাহার পর যাত্রা করা—এবং প্রভাত পর্য্যন্ত গাড়িতেই নিদ্রা যাওয়া— ইহাই এখানকার প্রচলিত রীতি। কিন্তু আমি তাহা করিলাম না।

 আমি যাত্রা করিতে উদ্যত হইলাম। এই সময়ে সূর্য্যের প্রখর উত্তাপ। পান্থশালার অধ্যক্ষ আমাকে দুই হাতে সেলাম করিতে লাগিল। নীরব যাচ্ঞা মুখে প্রকটিত করিয়া, তাম্রবর্ণ ভৃত্যবর্গ আমার গাড়ির সম্মুখে সারি দিয়া দাঁড়াইল। উহাদের মধ্যে একটি নগ্নপ্রায় দরিদ্র বৃদ্ধা ছিল। ভারতের প্রায় সমস্ত পান্থশালাতেই, স্নানাগারের জলাধারে জল ভরিয়া রাখাই ইহাদের কাজ। ত্রিবঙ্কুরের রৌপ্যমুদ্রা, আজ এই সর্ব্বপ্রথম, এই সব লোকদিগকে আমি নিজহাতে বিতরণ করিলাম। এই ক্ষুদ্র মুদ্রাগুলি, মোটা-মোটা ঝজ্‌ঝকে গুটিকার মত। আমাদের বলদেরা, এই অবসাদজনক উত্তাপের মধ্যে দুল্‌কি-চালে চলিতে লাগিল।

 ক্রমে ক্রমে, অপেক্ষাকৃত শাখাপল্লববহুল প্রদেশে—এমন কি, স্বকীয় উদ্ভিজ্জ প্রাচুর্য্যে সিংহলেরও সমকক্ষ—এরূপ একটি প্রদেশে উপনীত হইলাম। এই জঙ্গলটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুষ্পবৃক্ষে পরিপূর্ণ। উচ্চ তালবৃক্ষের কাণ্ডগুলি গতকল্য পীতাভ ও শুষ্ক দেখিয়াছিলাম; আজ দেখি, এখানে প্রচুর পত্রভূষণে সুশোভিত। বড় বড় হরিৎ-শ্যামল শাখা-পক্ষ বিস্তার করিয়া, নারিকেল-তুরুপুঞ্জ আবার আবির্ভূত হইয়াছে। ভূতল পর্য্যন্ত শিকড়কুন্তল বিস্তার করিয়া, মার্গপার্শ্বস্থ বটবৃক্ষগুলি আমাদের মাথার উপর ছত্রাকারে প্রসারিত। দেখিলে মনে হয়, এই প্রদেশটিতে তরুসমাচ্ছন্ন বিজনতা