পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৪১

হইবার পর, উহারা এদেশে আসিয়া উপনিবেশ স্থাপন করে। ইহাদিগকে কিংবা খৃষ্টানদিগকে কেহ কখন উৎপীড়ন করে নাই। কেন না, এদেশে ধর্ম্মসম্বন্ধীয় মতসহিষ্ণুতা সর্ব্বকালেই বিদ্যমান। এই স্থানটি মনুষ্যরক্তপাতে যে কখন কলুষিত হইয়াছে, এরূপ একটি দৃষ্টান্তও প্রাপ্ত হওয়া যায় না।

 আমাদের বলদেরা দুল্‌কি-চালে অনবরত চলিয়াছে। সন্ধ্যার সময় সূর্য্য অস্ত গেল। সেই সঙ্গে সিংহলের ন্যায় এখানকার বাতাসও গ্রীষ্মদেশসুলভ আর্দ্রতায় পূর্ণ হইল। কবোষ্ণ বৃষ্টিধারার পরম মিত্র নারিকেলবৃক্ষগুলি, অন্যান্য বৃক্ষকে অপসারিত করিয়া ক্রমে ক্রমে এখানে নিজ প্রভুত্ব বিস্তার করিয়াছে। আমরা এখন, সুবৃহৎ-শাখাবৃক্ষ-বিস্তারিত অফুরন্ত তালবৃক্ষের খিলানমণ্ডপতলে প্রবেশ করিয়াছি। ইহা পশ্চিমভারতের উপকূলবর্ত্তী প্রদেশের—মালাবার-উপকূলের শত-শত যোজন পর্য্যন্ত প্রসারিত। ‘ঘাট’-পর্ব্বতমালার অনুবন্ধী ক্ষুদ্র গিরিসমূহের পাদদেশ দিয়া আমরা যতই চলিতেছি, ততই শৈলচূড়াসমূহে, শৈলবিলম্বিত অরণ্যে, ঝটিকাসঙ্কুল নিবিড় জলদজালে, অত্রত্য নভোমণ্ডল ভারাক্রান্ত হইয়া উঠিতেছে।

 চারিঘণ্টা ধরিয়া অনবরত ঝাঁকানি খাইতেছি, তাহার সঙ্গে তালে-তালে বলদেরা দুলকি-চালে চলিতেছে। শুইয়া-শুইয়া আমি শ্রান্ত-ক্লান্ত-অবসন্ন; আর সহ্য হয় না। কি করি, আমার এই শবাধারের সম্মুখস্থ রন্ধ্র পথ দিয়া গলিয়া বাহির হইলাম এবং চালকের পার্শ্বে, যুগকাষ্ঠ-আসনের উপর, বানরেরা যেভাবে বসে, সেইভাবে একটু বসিলাম। দিবালোক অনেকটা কমিয়া আসিয়াছে। এই সকল মেঘের মধ্যে, এই সকল তালগাছের মধ্যে, সন্ধ্যা সবেমাত্র দেখা দিয়াছে। মার্গস্থ বটবৃক্ষের হরিৎ-শ্যামল সুরঙ্গপথ আমাদের সম্মুখ দিয়া বরাবর সমান চলিয়া গিয়াছে। কিন্তু স্থানে স্থানে, অরণ্যের মধ্যে, সন্ধ্যাছায়ায়, কতকগুলি পদার্থ অতীব অদ্ভুত কিম্ভূত-কিমাকার বলিয়া মনে হইতেছে। মনে হইতেছে, যেন কতকগুলা