পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

শ্যামল-কায় বিকটাকার গঠনহীন পশু, কখন বা একাকী নিঃসঙ্গ, কখন বা দলে দলে একত্র, অথবা পরস্পর উপর্য্যুপরি সমারূঢ় রহিয়াছে। এইগুলা শৈলস্তূপ ভিন্ন আর কিছুই নহে, কিন্তু কি অদ্ভুত, বিচিত্র! এই শৈলস্তুপগুলি স্থূলচর্ম্মী পশুদিগের ন্যায় বর্তুল ও তাহাদিগের চর্মের ন্যায় মসৃণ ও চিকচিকে। উহাদের পরস্পরের মধ্যে যেন কোনপ্রকার যোগসূত্র নাই; প্রত্যেকেই যেন পৃথকভাবে এখানে অধিষ্ঠিত। কোন সাধারণ হত্যাকাণ্ডের পর,: হতব্যক্তিদিগের দেহগুলি যেরূপ ভাবে থাকে, উহারা সেইরূপ নিষ্পেষিত, বিনিক্ষিপ্ত, ছিন্নবিচ্ছিন্ন ভাবে রহিয়াছে। সেই সঙ্গে, মোটামোটা গাছের ডাল, মোটামোটা গাছের শিকড়গুলা হস্তিশুণ্ডের সাদৃশ্য ধারণ করিয়াছে।•••যেন অত্রতা প্রকৃতিদেবী স্বকীয় শৈশবদশায়, বিবিধ শৈশবচেষ্টার বিকাশকালে, নির্জনে কোন জন্তুবিশেষের অকার লইয়াই ব্যাপৃত ছিলেন। যেন হস্তিমূর্ত্তির কল্পনা-অঙ্কুরটি বহুকাল হইতে এইখানে বিদ্যমান। এমন কি বিধাতা যখন গোড়ায় এই শৈলগুলি নির্মাণ করেন, তখনও বোধ হয় তাহার চিন্তার মধ্যে এই কল্পনাটি গৃঢ়ভাবে বিদ্যমান ছিল।

 বাস্তবিকই মনে হয়, হস্তী কিংবা হস্তীর ভ্রূণনিচয় যেন এখানে সর্ব্বত্রই দেখিতেছি। আমাদের চতুর্দ্দিকে, অরণ্যের অন্ধকার যতই ঘনাইয়া উঠিতেছে, ততই যেন এইরূপ সাদৃশ্য আমাদের মনে অধিকতররূপে প্রতিভাত হইতেছে;—আমাদের মনকে যেন একেবারে অধিকার করিয়া বসিতেছে।

 এখন আটটা রাত্রি। ঝটিকা আসন্ন বলিয়া অশঙ্কা হইতেছিল, কিন্তু জানি না, কি করিয়া সমস্ত আবার কোথায় বিলীন হইয়া গেল। স্বচ্ছ আকাশ, তারাময়ী রজনী। ঝিল্লী ও শলভগণ উল্লাসভরে গান করিতেছে। কীটগণের হর্ষকোলাহলে সমস্ত তরুপল্লব অনুরণিত।

 আমাদের সম্মুখে মশালের আলো দেখা যাইতেছে। তরুপল্লবের মধ্য দিয়া একদল লোক আমাদের অভিমুখে অগ্রসর হইতেছে। ঢাকঢোল ও