পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৪৭

বিষাদময় চীৎকারে, ছোট-ছোট পাখীর কলধ্বনি আচ্ছন্ন হইয়া যায়। প্রথমে, সঙ্কেতস্বরূপ পৃথক্‌ভাবে দুইএকটা কা-কা-শব্দ শুরু হয়, তাহার পর শতকণ্ঠে−সহস্রকণ্ঠে কা-কা-শব্দের ভীষণ সমবেত-সঙ্গীত বাহির করিয়া, কাকেরা পূতিগন্ধি শবদেহের জয়ঘোষণা করে।...…কাক, কাক, সর্ব্বত্রই কাক, ভারতভূমি কাকে আচ্ছন্ন; বরাবর দেখিতেছি,—ত্রিবঙ্কুরে, এই চিত্তবিমোহন শান্তিময় রাজ্যে,—ঊষার আরম্ভ হইতেই উহাদের চীৎকারে তালতরুমণ্ডপ পূর্ণ হইয়া উঠে, এবং যাহারা উহার সুন্দর পত্রপুঞ্জের নীচে বাস করে ও জাগ্রত হয়, তাহাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস সহসা স্তম্ভিত হইয়া যায়। কাকেরা যেন এই কথা বলেঃ—“সমস্ত মাংস কখন্ পচিয়া উঠিবে, তাহারই প্রতীক্ষায় আমরা এখানে আছি, আমাদের খাদ্য নিশ্চিত মিলিবে, আমরা সমস্তই আহার করিব।”...…

 তাহার পর, তাহারা চারিদিকে উড়িয়া যায়, আর তাহাদের সাড়াশব্দ থাকে না। আবার মনুষ্যের দূর-কোলাহল শ্রুত হয়;−অতীব প্রবল, অতীব গভীর; বেশ বুঝিতে পারা যায়, অসংখ্য ব্রাহ্মণ কোন বৃহৎ মন্দিরে সমবেত হইয়া স্বকীয় দেবতাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতেছে। তাহার পরেই, ‘ত্রিবন্দ্রম’-নগর যে তালকুঞ্জের মধ্যে অবস্থিত, তাহার চারিদিক্‌ হইতে ঢাক-ঢোল, করতাল-শঙ্খের মিশ্রিত কল্লোল এখানে আসিয়া পৌঁছে। অরণ্যের মধ্যে যে সকল ছোট-ছোট দেবালয় ইতস্তত বিকীর্ণ রহিয়াছে,− সেই সকল মন্দিরে ইহাই দিবসের প্রথম পূজা।

 অবশেষে সূর্য্যের উদয় হইল। সম্পূর্ণ-অবারিত এই সকল গৃহে সূর্য্যরশ্মি প্রবেশ করিল। অত্রত্য গৃহ ও নৈশপদার্থের মধ্যে স্তম্ভ ও পাতলা ‘চিক্’ ভিন্ন আর কোন অন্তরাল নাই। এই আলোকে, এই সুন্দর চমৎকার আলোকে, এই সুমধুর সময়ে, ঊষার সমস্ত বিষন্নতা কোথায় যেন অন্তর্হিত হইল। আমি উদ্যানে নামলাম।

 তাল-বনের মধ্যস্থলে একটি ফাঁকা জায়গায় এই উদ্যানটি অবস্থিত।