পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

ইহার মধ্যে কত শাদ্বলভূমি, কত গোলাপি-রঙের ফুলের বৃক্ষ, কত পর্ণতরু (Fern); উত্তপ্ত আর্দ্রস্থানেই এই পর্ণতরুগুলি জন্মায়। এরূপ অপূর্ব্ব পত্রপুঞ্জ ভারতবর্ষ ভিন্ন আর কোথাও দেখা যায় না। এইজাতীয় সর্ব্বপ্রকার বৃক্ষই এখানে আছে। কোন কোন পাতায় ফুলের মত রং; কোনটা ঘোর লাল, কোনটা বেগ্‌নি, কোনটা ফিঁকে-রক্তবর্ণ; কোনটায় সরীসৃপজাতীয় জীবদিগের পৃষ্ঠের ন্যায় ডোরাকাটা; আবার কোনটার গায়ে, প্রজাপতির পাখায় যেরূপ থাকে, সেইরূপ চোখ আঁকা।

 প্রাতে ৭টায়—যে সময়ে তরুবীথিমণ্ডপতলে নিশার শৈত্য একেবারে চলিয়া যায় নাই—সেই সময়েই এখানকার লোকদিগের দেখাশুনা করিবার, লোক-লৌকিকতা করিবার সময়।—অষ্মদ্দেশীয় রীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। আমি সংবাদ পাইলাম, কাল এই সময়ে, রাজার সহিত পরিচিত হইবার জন্য, আমাকে ব্রাহ্মণগণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করিতে হইবে।

 মধ্যাহ্নের কাছাকাছি,—এত তালবৃক্ষ, এত ছায়া সত্ত্বেও, উর্দ্ধগগনাবলম্বী সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপে জীবনপ্রবাহ যেন সহসা স্তম্ভিত হইয়া গেল। সর্ব্বত্রই ঘুমন্ত ভাব, সর্ব্বত্রই নিস্পন্দতা; সেই চিরন্তন বায়সেরাও নিস্তব্ধ,−পত্রপুঞ্জের নীচে ভূতলে উপবিষ্ট।

 আমার বারণ্ডা হইতে যে রাস্তাটি দেখিতে পাইতেছি, উহা হরিতের নৈশ অন্ধকারে মিলাইয়া গিয়াছে; সন্ধ্যা পর্যন্ত উহা লোকশূন্য থাকিবে। এখনও দুইচারিজন পথিক দৃষ্টিগোচর হইতেছে; উহারা নিজ নিজ কুটীরে ফিরিয়া যাইতেছে; ভারতবাসী অথবা ভারতবাসিনী; পরিধানে একইরকম লালধুতি; উজ্জলশ্যামবর্ণ তাম্রাভ গাত্র−নগ্নপদে নিঃশব্দে চলিতেছে। লোকদিগের লাল্‌চে-রঙের কাপড়; এবং উহারা লালমাটির উপর দিয়া চলিতেছে; এদিকে তালপুঞ্জের অত্যুজ্জ্বল হরিদ্বর্ণ;−এই বৈপরীত্যসংযোগে লালরঙের আরো যেন খোল্‌তাই হইয়াছে। কখন-কখন, কোন নিঃশব্দ গুরুপদক্ষেপে পথভূমি কাঁদিয়া উঠিতেছে। উহা হস্তীর পদক্ষেপ।