পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

আধুনিক নিয়মানুসারে, ‘পুনঃপুনঃ আওয়াজকারী’ নবপ্রচলিত বন্দুকের যথাযথ প্রয়োগ ও চালনা করিতে পারে।

 মহারাজা স্বয়ং অভ্যর্থনার জন্য দ্বারদেশে আসিয়া উপস্থিত। আমার ভয় ছিল, পাছে আমার সম্মুখে যুগোপীয়-বৃহৎ-কোর্ত্তাধারী কোন রাজমূর্তির আবির্ভাব হয়। কিন্তু না—মহারাজা সুরুচির পরিচয় দিয়া খাটি ভারতীয় বেশেই আসিয়াছিলেন। শাদা রেশমের পাগড়ি, মখমলের পরিচ্ছদ— বোদামগুলি স্বচ্ছ হীরকের।

 যে দরবারশালায় প্রথম আমার অভ্যর্থনা হইল, উহার কুট্টিমতল চীন-বাসনের দ্রব্যে মণ্ডিত; চাঁদোয়া হইতে কতকগুলি বেলোয়ারি ঝাড়লণ্ঠন ঝুলিতেছে; মধ্যস্থলে খোদাই-কাজ-করা একটা রৌপ্য-সিংহাসন, উহার চারিধারে কালো-রঙের আদাব,;—পুরু আব্লুস কাঠে খোদাইকাজ-করা ভারতীয়-ধাঁচার কালো আরাম-কেদারা; কি করিয়া এরূপ মূল্যবান্ কঠিন কাষ্ঠে খোদাই-কাজ করা যাইতে পাবে—এ কেবল আশিয়াখণ্ডের লোকেরাই জানে।

 ফরাসী-সরকারের একটি সম্মানভূষণ মহারাজকে প্রদান করিবার ভার আমার উপর অর্পিত হইয়াছিল;—এই সহজ কাজটি সম্পন্ন কবিয়া, তাঁহার সহিত য়ুরোপের বিষয় লইয়া কথাবার্তা আরম্ভ করিলাম। এই যুরোপদর্শন তাঁহার পক্ষে অসম্ভব; কেন না, বর্ণাশ্রম প্রথার দুর্লঙ্ঘ্য শাসনে, ভারতবর্ষ ছাড়িয়া তাঁহার কোথাও যাইবার যো নাই। প্রধানত সাহিত্যের বিষয় লইয়াই তাঁহার সহিত কথাবার্তা চলিল; কেন না, মহারাজা মার্জিতরুচি ও সুশিক্ষিত। পরে, তিনি হস্তিদন্তের আশ্চর্য্য আশ্চর্য বিচিত্র দ্রব্যসামগ্রী দেখাইবার নিমিত্ত, আমাকে একটি উচ্চ শিল্পাগারে লইয়া গেলেন। এই শিল্পসামগ্রীগুলি তিনি সযত্নে সংগ্রহ করিয়াছেন। এইবার বিদায়কাল উপস্থিত হইল। আমি মহারাজার নিকট বিদায় লইলাম।

 আবার সেই তালজাতীয় তরুপুঞ্জের হরিৎ অন্ধকাবের মধ্য দিয়া আমার