পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবাঙ্কুর-রাজ্যে।
৫৭

গাড়ি চলিতে লাগিল। এই অমায়িক রাজার সহিত, আর-একটু গভীরভাবে বিবিধ বিষয়ের আলোচনা করিতে পারিলাম না বলিয়া দুঃখ রহিয়া গেল। কেন না, আমাদের মনের গঠন ও তাঁহার মনের গঠন ভিন্ন হইবারই কথা।

 যে কয়েকদিন আমি এখানে থাকিব, তাহার মধ্যে অবশ্যই আবার আমাদের দেখাসাক্ষাৎ হইবে। কিন্তু এই প্রথম সাক্ষাৎকারেই আমি বুঝিয়াছি, এখানকার বৃহৎ মন্দিরটির ন্যায়, তাঁহার মনের অন্তরতম প্রদেশটিও আমার নিকট দুর্ভেদ্যরহস্যরূপেই থাকিয়া যাইবে। আমাদের উভয়ের মধ্যে, কি জাতি, কি কুল, কি ধর্ম্ম,সকল বিষয়েই মূলগত পার্থক্য বিদ্যমান। তা ছাড়া, আমাদের ভাষা এক নহে। বাধ্য হইয়া একজন তৃতীয় ব্যক্তিকে আমাদের মধ্যে রাখিতে হয়;—ইহাই ত একটা বিষম বাধা; দোভাষী যতই সাহায্য করুক না কেন, তবু যেন আমাদের মধ্যে একটা পর্দার ব্যবধান থাকিয়া যায়; এইজন্য আমাদের কথাবার্তা বেশিদূর অগ্রসর হইতে পায় না,—একস্থানে সহসা থামিয়া যায়।

 দুইতিনদিনের মধ্যে, আমি মহারাণীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে পাইব। মহারাণী পৃথক্ প্রাসাদে থাকেন। ইনি মহারাজের পত্নী নহেন,ইনি তাঁহার মাতুলানী। ত্রিবঙ্কুরের প্রধান গোষ্ঠাবর্গ যে জাতির অন্তর্গত, সে জাতিটি বহু প্রাচীন; উহা এক্ষণে ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশ হইতে একেবারে অন্তর্হিত হইয়াছে। এই জাতির মধ্যে, কেবল পত্নীর দিক্ দিয়াই লোকের নাম, উপাধি ও সম্পত্তি উত্তরবংশে সংক্রামিত হয়। তা ছাড়া পত্নীর স্বেচ্ছামত স্বামিপরিত্যাগের অধিকার আছে। |

 রাজপরিবারের মধ্যে, অভিজাতা প্রধান মহিলার জ্যেষ্ঠকন্যা—মহারাণী এবং জ্যেষ্ঠপুত্র—মহারাজা হইয়া থাকেন। কিন্তু বর্তমান মহারাণী কিংবা তাহার ভগিনীগণের সেরূপ কোন বংশসূত্র না থাকায়, বর্তমান রাজবংশ শীঘ্রই বিলুপ্ত হইবার কথা।