পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

 এই রাজত্বে, মহারাজার সন্তানদিগের কোন উত্তরাধিকারস্বত্ব নাই; শুধু অধিকার নাই তাহা নহে—“রাজকুমার” কিংবা “রাজকুমারী” এই উপাধিলাভেও তাহারা বঞ্চিত।

 এই ‘নায়ের’জাতীয় মহিলাদিগের মুখশ্রী অতীব সুন্দর। অসুদ্দেশীয় কুমারীদিগের ন্যায় উহার কেশের কিয়দংশ ফিতা দিয়া বাঁধিয়া রাখে, এবং অবশিষ্ট অংশ একপ্রকার গোলাকৃতি “চাপাটির” আকারে রচনা করিয়া তাহাই মস্তকের চূড়াদেশে ধারণ করে; তাহার কতকটা সম্মুখভাগে ও কতকটা পার্শ্বদেশে কপালের দিকে ঝুলিয়া পড়ে; দেখিলে মনে হয়,—কোঁঁচকানো-কিনারা একপ্রকার টুপি যেন বেশ একটু ঢং করিয়া মাথায় পরিয়াছে। কিন্তু উহাদের কেশরচনায় যেরূপ বিলাসলীলা প্রকাশ পায়, উহাদের দেহের সমস্ত সাজসজ্জায় তেনি আবার তাপসসুলভ একটা কঠোর গাম্ভীর্য্য দেদীপ্যমান।

 এখন সূর্যের প্রখর তাপ কমিতে আরম্ভ হইয়াছে; এই অপরাহ্ন চারঘটিকার সময় গায়ক-বাদকের দল আসিয়া পৌছিল; তাহারা দলে-দলে গরুর গাড়িতে আসিয়াহে। মহারাজা নিজ প্রাসাদের গায়ক-বাদকদিগকে কিয়ৎকালের জন্য আমার নিকট পাঠাইয়াছেন।

 উহাদের মুখাবয়ব-রেখা সূক্ষ্ম ও সুকুমার, সমস্ত মুখশ্রী কলা-গুণিজনসুলভ। নিঃশব্দে নগ্নপদে উহার প্রবেশ করিল;—মার্জারবৎ মখমলকোমল-পদসঞ্চারে প্রবেশ করিল। দস্তুরমত সম্মানপ্রদর্শনার্থ একটু নতশির হইয়া, তাহার পর ভূতলে গালিচার উপর উপবেশন করিল। মাথায় ক্ষুদ্র জরির পাগড়ি; উহাদের গাত্রপুরাকালীন গ্রীসীয়ধারণে—রেশমি বস্ত্রে আচ্ছাদিত;—উদরের একপার্শ্ব অনাবৃত রাখিয়া উহা স্কন্ধের উপর দিয়া লুটাইয়া পড়িয়াছে। বাহুদ্বয় ধাতব বলয়ে বিভূষিত। উহাদের ফিনফিনে পালা পরিচ্ছদের মধ্য হইতে আতর-গোলাপের গন্ধ ভুরভুর করিয়া বাহির হইতেছে।