পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবন্ধুর-রাজ্যে।
৬৩

ক্ষুদ্র চক্ষুর দৃষ্টি আমার উপর ন্যস্ত হইল। আর এমন শায়েস্তা,—যাহাতে আমি ধীরে-সুস্থে আরোহণ করিতে পারি, তজ্জন্য অনেকক্ষণ জানু পাতিয়া বসিয়া রহিল।

 আবার যখন আমি সেই মক্ষিকাগুঞ্জনবৎ সঙ্গীতের নিকট ফিরিয়া আসিলাম, তখন শুভ গোধূলি সঙ্গীতশালায় প্রবেশ করিয়াছে।

 মধ্যে মধ্যে যখন সেই স্তব্ধ প্রায় সমবেত সঙ্গীতের বিরাম হইতেছে — সেই অবকাশকালে প্রত্যেক যন্ত্র আবার পৃথকভাবে খুব উচ্চৈঃস্বরে সজোরে তান ধরিতেছে। বাদক কোনটাকে ছড়ের দ্বারা, কোনটাকে হস্তের দ্বারা প্রপীড়িত-কোনটাকে বা মিজ্‌রাফের দ্বারা সন্তাড়িত করিতেছে; এবং সর্ব্বাপেক্ষা বিস্ময়জনক, কোনটাকে তারের উপর ডিম্বাকৃত কাষ্ঠখণ্ড বুলাইয়া কাঁদাইয়া তুলিতেছে। কিন্তু সে যাহাই হউক, এই বিষাদময় সুরগুলি, মঙ্গলিয়া কিংবা চীনদেশীয় সঙ্গীতের ন্যায়, আমাদের নিকট নিতান্ত দূরদেশীয় কিংবা দুর্ব্বোধ বলিয়া মনে হয় না। আমরা উহাদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিতে পারি। সেই একই মানবজাতির সুতীব্র মর্ম্মবেদনা উহারা প্রকাশ করিতেছে—যে জাতি কালসহকারে আমাদের হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া দূরে চলিয়া গিয়াছে বটে, কিন্তু মূলত ভিন্ন নহে। “জিগান্”-নামক য়ুরোপীয় বেদিয়ারা আমাদের মধ্যেও এইরূপ জ্বরজ্বালাময় সঙ্গীত আনয়ন করিয়াছে।

 শেষে কণ্ঠসঙ্গীত। একটির পর একটি—সেই সমস্ত সুকুমার বালক-গুলি (সুন্দর-পরিচ্ছদ-পরিহিত -বড় বড় চোখ) খুব তাড়াতাড়ি দ্রুতলয়ে কতকগুলি গান গাহিল। উহাদের বালকণ্ঠস্বর ইহারই মধ্যে ভাঙ্গিয়া গিয়াছে—চিরিয়া গিয়াছে। জরির পাগড়ি-পরা একটি লোক উহাদের অধিনেতা ও শিক্ষক। সে মাথা নীচু করিয়া —পাথীকে যেরূপ সর্পেরা দৃষ্টির দ্বারা মুগ্ধ করে, সেইরূপ সমস্তক্ষণ উহাদের চোখের পানে একদৃষ্টে তাকাইয়া ছিল। মনে হইল যেন সে বৈদ্যুতিক শক্তির দ্বারা উহাদিগকে