পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতের অভিমুখে—যাত্রা-পথে।

কারের মধ্যে গিয়া পড়ে—যেখানে অপেক্ষাকৃত বড় গ্রহগুলা ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। আকাশের এই নীলিমা, যাহার উপর চির-পরিবর্ত্তনশীল বিচিত্র-আকারের মেঘগুলা অবিরাম খেলা করিয়া বেড়াইতেছে এবং যাহা অতলস্পর্শ গভীর বলিয়া আমাদের মনে প্রতিভাত হয়, উহা একটা পাতলা অবগুণ্ঠন মাত্র; আমাদের চোখকে ভুলাইবার জন্য, কালো অন্ধকারকে আমাদের নিকট হইতে লুকাইয়া রাখিবার জন্য, এই নীল অবগুণ্ঠন আমাদের সম্মুখে প্রসারিত রহিয়াছে; এ সমস্ত আসলে কিছুই নহে; আসল কথা, ঘোর কৃষ্ণবর্ণ অন্ধকার উহার অন্তরালে প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে। এই অন্ধকারই নিত্য পদার্থ, এই অন্ধকারই সর্ব্বাধিপতি; ইহার আদি নাই, অন্ত নাই; অনাদি কাল হইতে, ঐ কৃষ্ণবর্ণ শূন্যের মধ্য দিয়া, নিস্তব্ধভাবে কত শত জগৎ স্বকীয় কক্ষ হইতে চ্যুত হইতেছে, এই কৃষ্ণবর্ণ মহাশূন্য কখনও তাহাদিগকে আটকায় নাই,—কখনও তাহাদিগকে আটকাইবে না।

 আকাশ ও সমুদ্রের এই সমস্ত উজ্জ্বল নীলিমার মধ্য দিয়া এখনও ৭।৮ দিন চলিতে হইবে, তাহার পরেই আমার যাত্রা শেষ হইবে, আমার গন্তব্যস্থানে আমি উপনীত হইব। ধর্ম্মের পীঠস্থান, মানব-চিন্তার লীলাভূমি—সেই ভারতবর্ষে আমি এখন যাইতেছি; আমার ভয় হইতেছে পাছে সেখানে গিয়া কিছুই না পাই—পাছে সেখানে গিয়া আবার প্রতারিত হই। আত্মবিনোদনের জন্য, কিংবা শুধু একটা মনের খেয়ালে এবার আমি সেখানে যাইতেছি না; আর্য্য-জ্ঞানের রত্নভাণ্ডার যাহাদের হস্তে, তাহাদের নিকট এবার চিত্তশান্তি যাজ্ঞা করিতে যাইতেছি। খৃষ্টধর্ম্মের আশা-ভরসা আমার চিত্ত হইতে তিরোহিত হইয়াছে; আত্মার অনির্দ্দেশ্য দীর্ঘস্থায়িত্বের উপর তাহাদের যে বিশ্বাস আছে, খৃষ্টধর্ম্মের আশ্বাসের পরিবর্ত্তে সেই কঠোরতর বিশ্বাসটি যদি তাঁহারা আমাকে দিতে পারেন,—তাই জানিবার জন্যই আমি তাহাদের নিকট যাইতেছি...

 এই সময়ে সূর্য্য অস্ত হইতেছে। কি চমৎকার দৃশ্য! এই সূর্য্য-