পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবন্ধুর-রাজ্যে।
৭৩

আমাকে দেখাইলেন; তিনি নিজহস্তে সেগুলি পরিস্ফুট করিয়াছেন। এবং পরে, পদকপুরস্কারলাভের আশায় ঐগুলি সখ্ করিয়া তিনি য়ুয়োপের কোন প্রদর্শনীতে পাঠাইয়া দেন।

 আজ সন্ধ্যার সময়, সূর্যাস্তকালে, ভারতসমুদ্র দেখিতে আমার ইচ্ছা হইল। ত্রিবন্ধুর হইতে সমুদ্র প্রায় দেড়ক্রোশ দূরে। সেখানে উহার বীচিমালা বিজন তটভূমির উপর অনবরত ভাঙিয়া পড়িতেছে।

 মহারাজার একটা গাড়িতে উঠিয়া, প্রথমে সমস্ত প্রাচীরবেষ্টিত নগরটি অতিক্রম করিতে হইল। ব্রাহ্মণগৃহসমূহ্নের পার দিয়া যে সব রাস্তা গিয়াছে, দেই সব নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়া, প্রাসাদ ও উদ্যানের লাল প্রাচীরের সম্মুখ দিয়া, বৃহৎ মন্দিরটির ধার দিয়া, আমার গাড়ি চলিতে লাগিল। মন্দিবের এত নিকটে আমি ইতপূর্ব্বে কখন আসি নাই।

 শীঘ্রই নগর পার হইলাম এবং নগর পার হইয়াই, নিস্তব্ধ সৈকতভূমির মধ্যে, স্তুূপাকার বালুকারাশির মধ্যে আসিয়া পড়িলাম। রক্তবর্ণ প্রকাণ্ড সুর্য দিগন্তে মগ্নপ্রায়,—তাহারি ভাঙা-ভাঙা রশ্মিচ্ছটা চারিদিকে প্রসারিত। অম্মদ্দেশের সমুদ্রোপকূলস্থ বৃক্ষের ন্যায়, বাতাহত ও অলুলিতশাখ কতক-গুলি বিরল তালজাতীয় বৃক্ষ, সাগরবায়ুর অবিশ্রান্ত প্রনাহবেগে, ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে। বহুশতাব্দীসঞ্চিত এই সব বালুকারাশি, এই সমস্ত প্রস্তর, প্রবাল ও শম্বূকের চূর্ণরাশি, সহস্র-সহস্র চূর্ণীকৃত জীবদেহের ধুলিরাশি। এই ভীষণ স্থানের সান্নিধ্য ঘোষণা করিতেছে। তাহার পরেই, সেই অন্তহীন মহাকণ্ঠস্বর শ্রুত হইল। এবং এই বালুকাস্তুপের মধ্যে, একটা পথের বাঁক ফিরিবামাত্র, সেই সচল অনন্তমূর্ত্তি আমার সম্মুখে সহসা আবিভূত হইল।

 পৃথিবীর অন্যান্য প্রদেশে, মনে হয় যেন, মানবজীবন স্বভাবতই সমুদ্রের অভিমুখে প্রবাহিত হয়। সেখানে লোকেরা সমুদ্রের ধারে আবাসগৃহ নির্ম্মাণ করে, সমূদ্রের যতটা নিকটে হওয়া সম্ভব—তাহাদের নগর পত্তন