পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

আয়োজন করিয়াছিলেন; বালিকাগণের অভিভাবকদিগকে বলিয়া পাঠাইয়াছিলেন, যেন বয়োজ্যেষ্ঠদিগের গুরুভার অলঙ্কারে ভূষিত করিয়া উহাদিগকে বিদ্যালয়ে পাঠান হয়। তাই, মন্দিরের দেবীগণ যেরূপ অলঙ্কার ধারণ করেন, সেইরূপ সুগঠিত মণিমাণিক্যের পুরাতন অলঙ্কারগুলি এই সকল তরুণ বাহুতে—তরুণ কণ্ঠে অধিষ্ঠিত হইয়া ঝিক্‌মিক্ করিতেছিল।

 এই বিদ্যালয়ের পড়িবার ঘরগুলি আমাদের য়ুরোপীয় ইস্কুলের পড়িবার ঘরের ন্যায়;—স্বল্প-উপকরণ ও মুক্ত-পরিসর। শুধু কতকগুলি বড়-বড় মানচিত্র শাদা দেয়ালের গায়ে ঝুলিতেছে। কচি-কচি মেয়েগুলি হইতে, বয়স্ক বালিকা পর্য্যন্ত—এই সমস্ত অপূর্ব্ব ছাত্রীবৃন্দ—আমার চক্ষে কতকগুলি পুতুল বলিয়া মনে হইল। কচি মেয়েগুলির ড্যাবা ড্যাবা চোখের বিস্ফারিত তারা চারিদিকে ঘুরিতেছিল। শাড়ী ও জরির চোলী—এই দুয়ের মধ্যবর্ত্তী স্থানে, উহাদের তাম্রাভ নগ্নগাত্র দেখা যাইতেছিল। বড়-বড় বালিকাগুলির মাথার উপরিভাগে “ভর্জিন্‌”-ধরণে ফিতা বাঁধা, তাহার উপর ভারতীয় শাদা মল্‌মলের অবগুণ্ঠনবস্ত্র। যে বয়সে বালিকারা স্বীয় শরীরকে দেবালয়বৎ সযত্নে রক্ষা করিতে প্রথম আরম্ভ করে—সেই বয়সের বালিকাদিগের দৃষ্টিতে যে উদ্বেগ ও গাম্ভীর্য্যের ভাব লক্ষিত হয়, এই বালিকাদিগের মুখে ইহারি মধ্যে সেই ভাব পরিব্যক্ত।...উহাদের প্রবন্ধরচনা, উহাদের ঐতিহাসিক রচনা আমাকে দেখান হইল। ঐ ক্ষুদ্র দেবীগুলি যে-সব সুন্দর ছবি আঁকিয়াছে, তাহাও আমাকে দেখান হইল। যে-সব আদর্শ আমাদের শিশুরা নকল করে—য়ুরোপ হইতে আনীত সেই-সব আদর্শচিত্র দেখিয়াই এই ছবিগুলি আঁকা। এই সব চিত্ররচনার নীচে উহাদের নাম লেখা। নামগুলি কতিপয়-পদাক্ষর-বিশিষ্ট—গানের কলির ন্যায় অতীব সুশ্রাব্য।

 ছয়সাত-বৎসর-বয়স্কা একটি বালিকা, একটা “ঈগ্‌ল্‌”-পক্ষীর ছবি