পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিংহলে।

আমাদিগকে ক্রমাগত টানিতেছে—কিন্তু আমাদের এই ক্ষুদ্র গ্রহদের কি দুর্দ্দশা, সূর্য্যের অভিমুখে ছুটিয়া চলিয়াছে অথচ কস্মিন কালেও সেখানে পৌঁছিতে পারিবে না; এই সকল সূর্য্যেরা তবু কতকটা স্বাধীনভাবে শূন্যের মধ্যে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, কিন্তু আমাদের গ্রহগণ, পেঁচাল গতি অনুসরণ করিয়া ক্রমাগতই সূর্য্যের চতুর্দ্দিকে ছুটিতেছে।

 মধ্য আকাশ হইতে দিগন্ত পর্য্যন্ত,কোথাও একটি মেঘ নাই, আকাশে চমৎকার স্বচ্ছতা। এক্ষণে আমাদের নেত্রসমক্ষে সেই অসীম শূন্য উদ্ঘাটিত, যেখানে প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড অসংখ্য জগৎ ক্রমশ পতিত হইতেছে, অগ্নিময়বৃষ্টিবিন্দুবৎ ক্রমাগত পতিত হইতেছে; যাই হোক্‌, কিন্তু নিশার আগমনে, তারকা-খচিত আকাশ হইতে আমাদের জন্য মধুর শান্তি নামিয়া আসিল।

 মনে হয় যেন উপর হইতে, সোৎকণ্ঠ স্নেহ আসিয়া আমাদের অন্তরাত্মার উপর অল্পে অল্পে স্নিগ্নছায়া বিস্তার করিতেছে……আহা, যাঁহাদের নিকটে আমি এখন যাইতেছি সেই ভারতের তত্ত্বজ্ঞানীরা এই স্নেহযত্ন, এই অনুকম্পার সত্যতা সম্বন্ধে যদি আমার ধ্রুব বিশ্বাস জন্মাইয়া দিতে পারেন!


সিংহলে।

অনুরাধপুর।

 এই ত সেই ভারতবর্ষ; সেই অরণ্য; সেই জঙ্গল।

 দিনের অভ্যুদয়ে, শাখা-পল্লবময়, তৃণ-গুল্মময় একটি নুতন জগৎ যেন আমার সম্মুখে উদ্ভাসিত হইল। চির-হরিতের অসীম সমুদ্র, অনন্ত রহস্য, অনন্ত নিস্তব্ধতা দিগন্তের শেষ সীমা পর্য্যন্ত আমার পদতলে প্রসারিত হইল।