পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৯১

করিতে পারিবে না,—এই ব্যাপার অনাদিকাল হইতে চলিয়া আসিতেছে।

 তটভূমি নিকটবর্ত্তী হইলে দেখা যায়,—মহাপ্রভাবশালী নারিকেলপুঞ্জের নীচে নিম্নশ্রেণী ইতর লোকদিগের বাস। এই দীনহীন মানবকুলের অস্তিত্ব বৃক্ষগণের অস্তিত্বের উপর একান্ত নির্ভর করে। নারিকেলপত্রের ডাঁটাগুলা একটা গুঁড়ি হইতে অন্য গুঁড়িতে প্রসারিত হইয়া বেড়ার কাজ করিতেছে; মৎস্যের জাল, রসারসি—সমস্তই নারিকেল-ছোব্‌ড়ায় প্রস্তুত।

 এই অতীব প্রয়োজনীয় বৃক্ষগুলি শুধু যে ছায়াদান করে—ফল দান করে,—তৈল দান করে, তাহা নহে; যাহারা উহাদের হরিৎশ্যামল অনন্ত ছায়াতলে বাস করে, তাহাদের যাহা-কিছু আবশ্যক, সমস্তই উহারা যোগাইয়া থাকে।

 রঙিন রেশমের তল্‌তলে গদির মত, চৌকোণা এক-এক টুক্‌রা ধানের ক্ষেত যে ইতস্তত দেখা যায় মনে হয়,—এ প্রদেশে সে সকল ক্ষেত না থাকিলেও চলে—খাদ্যের কোন অভাব হয় না।

 বিলটি ক্রমশই বিস্তৃত আকার ধারণ করিতেছে। এইবার একটু অনুকূল বাতাস উঠিয়াছে। বাহুদ্বয়ের সাহায্যার্থ,—মাল্লারা, ৪।৫গজ উচ্চ একটা দর্ম্মা একটা মাস্তুলের উপর চড়াইয়া দিল; নিরীহ-ধরণের এই ক্ষুদ্র সমুদ্রটির উপর পাল ও দাঁড়যোগে আমাদের নৌকা আরো দ্রুত চলিতে লাগিল। বিলের দুই কূলে বন; এই বনরাজি দূর হইতে নীলাভ বলিয়া প্রতীয়মান হয়। বায়ুবেগে, নৌকায় প্রসারিত পালটি ফুলিয়া উঠিতেছে; এই বায়ুর সাহায্য পাইয়া মাল্লারা নিজ বাহুবেগ অনেকটা কমাইয়া দিয়াছে এবং আর-এক ধরণের তান উঠাইয়া একপ্রকার ঘুমের গান মুখ দিয়া গাহিতে আরম্ভ করিয়াছে। মনে হয়, যেন গির্জ্জা-ঘড়ির সুর-সংবুলিত ঘণ্টাধ্বনি দূর হইতে আসিতেছে—আর যেন, তাহা ফুরায় না।