না দ্যাও, পাঁচ পয়সা দিও। এক মুঠো নিয়ে চিবিয়ে দ্যাখো কেমন মিষ্টি। আকোরকোরার মত।
—চল বাড়ির মধ্যি। পয়সা কিন্তু বাকি থাকবে।
—ঐ দ্যাখো, তাতে কি হয়েচে? ওবেলা দিও।
—ওবেলা না। মঙ্গলবারের ইদিকি হবে না।
—তাই দিও।
এই ফাঁকে খোকা খপ করে একমুঠো চাল ধামা থেকে উঠিয়ে নিয়েই মুখে পুরে দিলে। কিছু কিছু পড়ে গেল মাটিতে। ভবানী ওর হাত থেকে চাল কেড়ে নিয়ে কোলে নিয়ে বললেন—হাঁ করো—হাঁ করো খোকা—
খোকা অমনি আকাশ-পাতাল বড় হাঁ করলে, এটা তিলু খোকাকে শিখিয়েচে। কারণ যখন তখন যা-তা সে দুই আঙুলে খুঁটে তুলে সর্বদা মুখে পুরচে, ওর মা বলে—হাঁ কর খোকন্—নক্ষি ছেলে। কেমন হাঁ করে—
অমনি খোকা আকাশ-পাতাল হাঁ করে অনেকক্ষণ থাকবে, সেই ফাঁকে ওর মা মুখে আঙুল পুরে মুখের জিনিস বার করে ফেলবে।
আজকাল সে হাঁ ক’রে বলে—আঁ—আ—আ—আ
ওর মা বলে—থাক—থাক। অত হাঁ করতি হবে না—
ভবানী বাঁড়ুয্যে খোকনের মুখ থেকে আঙুল দিয়ে সব চাল বের করে ফেলে দিলেন। এমন সময় পথের ওদিক থেকে দেখা গেল ফণি চক্কত্তি আসচেন, পেছনে ভবানীর মামা চন্দ্র চাটুয্যে। ভবানী বললেন—তিলু, তুমি দীনু বুড়িকে নিয়ে ভেতরে যাও—খোকাকেও নিয়ে যাও—
ওঁরা দুজন কাছে আসচেন, তিলু খোকাকে নিতে গেল, কিন্তু সে বাবার কোল আঁকড়ে রইল দু’হাতে বাবার গলা জাপটে ধরে। মুখে তারস্বরে প্রতিবাদ জানাতে লাগলো।
তিলু বললে—ও আপনার কোল থেকে কারো কোলে যেতে চায় না, আমি কি করবো?
ভবানী হাসলেন। এ খোকাকে তিনি কত বড় দেখলেন এক মুহূর্তে।