কুলীন কন্যের ভাতার জুটলো বুড়োবয়সে। তাই আবার ছেলে হয়েছে। ভক্তি কি অমনি আসে? যা হোত না, তাই পেয়েচে। ওদের বড় ভাগ্যি, বুড়ো ধুমড়ি বয়েসে বর জুটেচে।
শ্রোতাগণ ঘাঁটিয়ে আরও শোনবার জন্যে বলে—তবুও বর তো?
—হ্যাঁ, বর বইকি। তার আর ভুল? তবে—
—কি তবে—
—বড্ড বেশি বয়েস।
—যাও, যাও, কুলীনের ছেলের আবার বয়েস।
সবাই কিন্তু এখানে একমত হয় যে ভবানী বাঁড়ুয্যে সত্যই সুপাত্র এবং সৎ ব্যক্তি। কেউ এ গাঁয়ে ভবানী বাঁড়ুয্যের সম্বন্ধে নিন্দের কথা উচ্চারণ করে নি, যে পাড়াগাঁয়ের চণ্ডীমণ্ডপের মজলিসি ঘোঁটে ব্রহ্মাবিষ্ণু পর্যন্ত বাদ যান না, সেখানে সবার কাছে অনিন্দিত থাকা সাধারণ মানুষ পর্যায়ের লোকের কর্ম নয়।
ভবানী বাঁড়ুয্যে সন্ধ্যের আগেই ফণি চক্কত্তির চণ্ডীমণ্ডপে গিয়ে বসলেন। কার্তিক মাস। বেলা পড়ে একদম ছায়ানিবিড় হয়ে এসেচে, ভেরেণ্ডাগাছের বেড়া, চাবাগানের শেওড়া আকন্দের ঝোপ। বনমরচে লতার ফুলের সুগন্ধ বৈকালের ঠাণ্ডা বাতাসে। ফণি চক্কত্তির বেড়ার পাশে তাঁরই ঝিঙে ক্ষেতে ফুল ফুটেচে সন্ধ্যেতে। শালিখের দল কিচ্কিচ্ করচে চণ্ডীমণ্ডপের সামনের উঠোনে কার্তিকশাল ধানের গাদার ওপরে।
ফণি চক্কত্তির সেকেলে চণ্ডীমণ্ডপ। একটা বাহাদুরি কাঠের খুঁটির গায়ে খোদাইকরা লেখা আছে—“শ্রীশিবসত্য চক্কবর্তী কর্তৃক সন ১১৭২ সালে মাধব ঘরামি ও অক্রুর ঘরামি তৈরি করিল এই চণ্ডীমণ্ডপ ইহা ঠাকুরের ঘর ইহা জানিবা”—সুতরাং চণ্ডীমণ্ডপের বয়স প্রায় একশত বছর হতে চলেচে। অনেক দূর থেকে লোকে এই চণ্ডীমণ্ডপ দেখতে আসে। খড়ের চালের ছাঁচ ও পাট, রলা ও সলা বাখারির কাজ, ছাঁচপড়নের বাঁশের কাজ, মটকায় দুই লড়ায়ে পায়রার খড়ের তৈরী ছবি দেখে লোকে তারিফ করে। এমন কাজ এখন নাকি