পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এইবার সে বলে উঠলো~-আপনারা কোথাকার রাণীর কথা বললেন, লড়াই করলেন কাদের সঙ্গে। ও কথা শুনে আমার কেবলই মনে পড়চে কুমুদিনী জেলের কথা-

 দীনু ভটচাজ বললেন—বোস! কিসি আর কিসি! কোথায় সেই কোথাকার বাণী লক্ষ্মীবাঈ, আর কোথায় কুমুদিনী জেলে! কেডা সে?

 ঈশ্বর বোষ্টম একেবারে উত্তেজনার মুখে উঠে দাড়িয়েছে। দু' হাত নেড়ে বললে—আজ্ঞে ও কথা বলবেন না, খুড়ো ঠাকুর। আপনি সেতো কুমুদিনী জেলেকে জানেন না, দ্যাখেন নি, তাই বলছেন। তারে যদি দ্যাখতেন, তবে আপনারে বলতি হোত, হ্যাঁ, এ একখানা মেয়েছেলে বটে! এই দশাসই চেহারা, দেখতিও দশভুজো পিরতিমের মত। তেমনি সাহস আর বুদ্ধি। একবার আমাদের মধ্যি দুজনের ভেদবমির ব্যায়াম হোল গয়া যাবার পথে, নিজের হাতে তাদের কি সেবাটা করতি দ্যাখলাম। মায়ের মত। এক গয়ালি পাণ্ডার সঙ্গে কোমর বেঁধে ঝগড়া করলেন, যাত্রীদের টাকা মোচড় দিয়ে আদায় করা নিয়ে। সে কি চেহারা? বললে, তুমি জানো আমার নাম কুমুদিনী, আমি ফি বচ্ছর দু'শো যাত্রী গয়ায় নিয়ে আসি। গোলমাল করব তো এই সব যাত্রী আমি অন্য গয়ালি পাণ্ডার কাছে নিয়ে যাবে। পাণ্ডা ভয়ে চুপ। আর কথাটি নেই। সেথোদের মান না কখলি যাত্রী হাতছাড়া হয়— বোঝলেন না? অমন মেয়েমানুষ আমি দেখি নি। কেউ কাছে ঘেষে একট। ফষ্টিনষ্টি করুক দেখি? বাবাঃ, কারু সাধ্যি আছে? নিজের মান বাখতি কি করে হয় তা সে জানে।

  ভবানী বাঁড়ুয্যে বললেন -একবার নিয়ে এসো না এখানে। দেখি।

 ভবানীর কথায় সবাই সায় দিয়ে বললেন- হ্যা, আনো না। তোমার তো জানাশুনো। আমরা দেখি একবার-

 ঈশ্বর বোষ্টম চুপ করে রইল। দীনু ভটচাজ বললেন—কি? পারবে না?

 ঈশ্বর বললে—আজ্ঞে, তার মান বেশি। সেখোদের তিন মোড়ল। আমার কথায় তিনি এখানে আসবেন না। বাড়িও অনেক দূর, সেই হুগলী জেলায়।

১২৪