পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 নীলমণি সমাদ্দার বলে উঠলেন—দেওয়ানজি যে, এদিকে এসে মন্ত্রীটা সামলাও তো দাদাভাই—

 ফণী চক্কত্তি বললেন—আমার কাছে বোসো ভাই, এখানে এসে। তামাক সাজবো?

 রাজারাম হাসিমুখে সকলকেই আপ্যায়িত করে বললেন—বোসো দাদা। চন্দর কাকা, আপনার এখানে দেখচি মস্ত আড্ডা—

 চন্দ্র চাটুয্যে বললেন—এসো না তো বাবাজি কোনোদিন। আমরা পড়ে আছি একধারে, দ্যাখো না তো চেয়ে।

 রাজারাম শতরঞ্চির ওপর পা দিতে না দিতে প্রত্যেকে আগ্রহের সঙ্গে সরে বসে তাঁকে জায়গা করে দিতে উদ্যত হোল। নীলমণি সমাদ্দার অপেক্ষাকৃত হীন অবস্থার গৃহস্থ, সকলের মন রেখে কথা না বললে তাঁর চলে না। তিনি বললেন—দেওয়ানজি আসবে কি, ওর নিজের চণ্ডীমণ্ডপে বোজ সন্দেবেলা কাছারি বসে। আসামী ফরিয়াদীর ভিড় ঠেলে যাওয়া যায় না। ও কি দাবার আড্ডায় আসবার সময় করতে পারে?

 ফণী চক্কত্তি বললেন—সে আমরা জানি। তুমি নতুন করে কি শোনালে কথা।

 নীলমণি বললেন—দাবায় পাকা হাত। একহাত খেলবে ভায়া?

 রাজারাম এগিয়ে এসে হুঁকো নিলেন ফণী চক্কত্তির হাত থেকে। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ চন্দ্র চাটুয্যের সামনে তামাক খাবেন না বলে চণ্ডীমণ্ডপের ভেতরের ঘরে হুঁকো হাতে ঢুকে গেলেন এবং খানিক পরে এসে নীলমণির হাতে হুঁকো দিয়ে পূর্বস্থানে বসলেন।

 দাবা খেলা শেষ হোল। রাত দশটারও বেশি। লোকজন একে একে চলে

 চন্দ্র চাটুয্যেকে রাজারাম তাঁর আগমনের কারণ খুলে বললেন। চন্দ্র চাটুয্যের মুখ উজ্জ্বল দেখালো।

 রাজারামের হাত ধরে বললেন—এইজন্যে বাবাজির আসা? এ কঠিন কথা কি! কিন্তু একটা কথা বাবা। ভবানী সন্নিসি হয়ে গিইছিল, তোমাকে