এই যে বসে খাচ্চে প্রসন্ন চক্কত্তি—সে মানসনেত্রে কার সুঠাম তনুভঙ্গী, কার আয়ত চক্ষু বিলোল দৃষ্টি, কার সুন্দর মুখখানি ওর চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠচে? ভাতের দলা গলার মধ্যে ঢুকচে না চোখের জলে গলা আড়ষ্ট হওয়ার জন্যে। সে কার কথা মনে হয়ে?…ছোট সাহেবের মদগর্বিত পদধ্বনিও সে তুচ্ছ করেচে কার জন্যে? প্রসন্ন আমীন এতদিন পরে সুখের উখ দেখতে পেয়েছে। মেয়েমানুষ কখনো তার দিকে সুনজরে চেয়ে দেখেনি। কত বড় অভাব ছিল তার জীবনে। প্রথমবার যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল, গোঙাট গেত্তিয়ে গেঙিয়ে কথা বলতো, নাম যদিও ছিল সরস্বতী। গোঙা হোক, সরস্বতী কিন্তু বড় যত্ন করতো স্বামীকে, তখন সবে বয়েস উনিশ-কুড়ি। প্রসন্ন বাবা রতন চক্কত্তি ছেলেকে বড় কড়া শাসনে রাখতেন! বাবা দেখেশুনে বিয়ে দিয়েছিলেন, বলবার জো ছিল না ছেলের! সাধ্য কি?
সরস্বতী রাত্রে পান্তাভাত খেতে দিয়ে লেবু কেটে দিত, তেঁতুলগোলা, লঙ্কা আর তেল দিত মেখে খাবার জন্যে। চড়কের দিন একখানা কাপড় পেয়ে গোঙা স্ত্রীর মুখে কি সরল আনন্দ ফুটে উঠতো। বলতো, আমার বাপের বাড়ি চলো, উচ্ছে দিয়ে কাঁটালবীচি চচ্চড়ি খাওয়াবে। আমাদের গাছে কত কাঁটাল? এত বড় বড় এক একটা! এত বড় বড় কোয়া!
হাত ফাঁক করে দেখাতো।
আবার রসকলির গান গাইতো আপন মনে গোঙানো সুরে। হাসি পায়নি কিন্তু সে গান শুনে কোনো দিন। মনে বরং কষ্ট হোতো। না, দেখতে শুনতে ভালো না বরং কালো, দাঁত উঁচু। তবুও পুষলে বেড়াল-পুকুরের ওপরও তো মমতা হয়।
সরস্বতী পটল তুললো প্রথমবার ছেলেপিলে হতে গিয়ে। আবার বিয়ে হোলো রাজনগরের সনাতন চৌধুরীর ছোট মেয়ে অন্নপূর্ণার সঙ্গে। অন্নপূর্ণা দেখতে শুনতে ভালো এবং গৌরবর্ণের মেয়ে বলেই বোধ হয় একটু বেশ গুমুরে। সে এখনো বেঁচে আছে তার বাপের বাড়িতে। ছেলে মেয়ে হয়নি। কোনোদিন মনে-প্রাণে স্বামীর ঘর করেনি; না করার কারণ বোধ হয় ওর বাপের বাড়ির