পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

না। তুই না থামলি থোকনও থামবে না। চুপ কর। |

 তিলু বললে—হ্যাঁ রে, আমাদের দাদা নয়? আমরা কি কাঁদচি? অমন করতি নেই। ওতে অমঙ্গল ডেকে আনা হয়, চুপ কর। দাদা হয়তো আজই এসে পড়বে দেখিস এখন। থাম বাপু-

 তিলুর মুখের কথা শেষ হতে না হতে ভবানী এসে ঘরের মধ্যে ঢুকলেন। প্রথম কথাই বললেন—দাদা এসেছেন তিতু মীরের লড়াই ফেরতা। দেখা করে এলাম। এ কি? কঁদছে কেন ও? কি হয়েছে?

 —ও কাঁদছে দাদার জন্যি। বাঁচা গেল। কখন এলেন?

 —এই তো ঘোড়া থেকে নামচেন।

 নিলু কান্না ভুলে আগেই উঠে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনেছিল। কথা শেষ হতেই বললে-চলো মেজদি, আমরা যাই বড়দাদাকে দেখে আসি।

 ভবানী বাডুয্যে বললেন-যেও না।

 —যাবো না? বড্ড দেখতে ইচ্ছে করচে।

 —আমি নিজে গিয়ে তত্ত্ব নিয়ে আসছি। তুমি গেলে তোমার গুণধর দিদি যেতে চাইবে। খোকাকে রাখবে কে?

 তিলুও বললে—না যাস নে, উনি গিয়ে দেখে আসুন, সেই ভালো।

 ওদের একটা গুণ আছে, ভবানী বারণ করলে আর কেউ সে কাজ করবে না। নিলু বললে—আপনার মনটা বড় জিলিপির পাক, জানলেন? আমার দাদার জন্যি আমার কি যে হচ্ছে, আমিই জানি। দেখে আসুন, যান—


 আধঘণ্টা পরে দেওয়ান রাজারামের চণ্ডীমণ্ডপে অনেক লোক জড়ো হয়েছে। তার মধ্যে ভবানী বাঁড়ুয্যেও আছেন।

 ফনি চক্কত্তি বললেন-তারপর ভায়া, কোনো চোট লাগে নি তো!

 রাজারাম রায় বললেন-না দাদা, তা লাগে নি, আপনাদের আশীর্বাদে যুদ্ধই হয় নি। এর আগে ওরা অনেক লোক নাকি মেরেছিল, সে হলো নিরীহ গাঁয়ের লোক।

১৬২