পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যে লোকজন ঘোরাফেরা করে তা বুঝি সে জানে না? কত অবাঞ্ছিত আবেদন ও প্রার্থনার জঞ্জাল সরিয়ে রাখতে হয় ঝাঁটা হাতে। কচি খুকি নয় বরদা বাগ্‌দিনী। আমীন মশায় বলে সন্দেহের অতীত এরা নয়, বয়স বেশি হয়েছে বলেও নয়। অনেক প্রৌঢ়, অনেক অল্পবয়সী, অনেক আত্মীয়কে সে দেখলো। কাউকে বিশ্বাস নেই।

 প্রসন্ন চত্তি জোরে ঘোড়া ছুটিয়ে গেল।

 হিংনাড়া গ্রামের বাইরে চারিধারে নীলের ক্ষেত। এমন সময় নীলের চারা বেশ বড় বড় হয়েছে। বড়সাহেবকে ছোটসাহেব ডেকে দেখিয়ে বললে- See what they are up to.

 এমন সময়ে দেখা গেল লাঠি হাতে একটি জনতা বাগ্‌দিপাড়া থেকে বেরিয়ে মাঠের আলে আলে ক্রমশ এদিকে এগিয়ে আসচে।

 দেওয়ান রাজারাম বললেন-সায়েব, ওরা ঘিরে ফেলবার মতলব করছে। জুন আরও এগিয়ে-

 ডেভিড্ বললে-তুমি ফিরে যাও, এদের ঘরে আগুন দিতি হবে,লোকজন নিয়ে এসো।

 রসিক মল্লিক লাঠিয়াল বললে—কিছু লাগবে না সায়েব। মুই এগিয়ে যাই, দাড়ান আপনারা-

 বড়সাহেব বললে—You stay, আমি আর ছোটসায়েৰ যাইবেন। সড়কি আনিয়াছ?

 —না সায়েব, সড়কি লাগবে না। মোর লাঠির সামনে একশো লোক দাড়াতে পারবে না। আপনি হঠে আসুন।

 দেওয়ান রাজারাম ততক্ষণ ঘোড়া এগিয়ে হিংনাড়া গ্রামের উত্তর কোণের দিকে ছুটিয়েচেন। বড়সাহেব চেঁচিয়ে বললেন—বসিক, তোমার সহিট যাইবে ডেওয়ান—

 কিছুক্ষণ পরে খুব একটা চীৎকার ও আর্তনাদ শোনা গেল। বাগ্‌দি পাড়ার ছোট ছেলেমেয়ে ও ঝি-বৌয়েরা প্রাণপণে চেঁচাচ্চে ও এদিক-ওদিক

১৮০