পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 খোকা যে কটি মাত্র শব্দ শিখেচে তার মধ্যে একটা হোলা ‘ওখেনে'। এই কথাটা কারণে অকারণে সে প্রয়োগ করে থাকে। সম্প্রতি সে হাত দিয়ে সামনের দিকে দেখিয়ে বললে-ওখেনে—

 —ওখেনে নেই। কোথাও নেই।

 —ওখেনে-

 —না, চল বেড়িয়ে আসি-কোল থেকে নামবি? হাঁটবি?

 —আঁটি-

 খোকা ভবানীর আগে আগে বেশ গুট্ গুট্ ক'রে হাঁটতে লাগলো। খানিকটা গিয়ে আর যায় না। ভয়ের সুরে সামনের দিকে হাত দেখিয়ে বললে- ছিয়াল!

 —কই?

 শিয়াল নয়, একটা বড় শামুক রাস্তা পার হচ্ছে। ভবানী খোকার হাত ধরে এগিয়ে চললেন—চলো, ও কিছু নয়। খোক তখনও নড়ে না, হাত দুটো তুলে দিলে কোলে উঠবে বলে। ভবানী বললেন-না, চলো, এতে ভয় কি? এগিয়ে চলো-

 খোকার ভাবটা হোলো ভক্তের অভিযোগহীন আত্মসমর্পণের মত। সে বাবার হাত ধরে এগিয়ে চললো শামুকটাকে ডিঙিয়ে, ভয়ে ভয়ে যদিও, তবুও নির্ভরতার সঙ্গে। ভবানী ভাবলেন-আমরাও যদি ভগবানের ওপর এই শিশুর মত নির্ভরশীল হতে পারতাম! কত কথা শেখায় এই খোকা তাঁকে। বৈষয়িক লোকদের চণ্ডীমণ্ডপে বসে বাজে কথায় সময় নষ্ট করতে তাঁর যেন ভালো লাগে না আর।

 এক মহান শিল্পীর বিরাট প্রতিভার অবদান এই শিশু। ওপরের দিকে চেয়ে বিরাট নক্ষত্রলোক দেখে তিনি কত সময় মুগ্ধ হয়ে গিয়েচেন। সেদিকে চেয়ে থাকাও একটি নীরব ও অকপট উপাসনা। পশ্চিমে তাঁর গুরুর আশ্রমে থাকবার সময় চৈতন্যভারতী মহারাজ কতবার আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলতেন—ঐ দেখ সেই বিরাট অক্ষয় পুরুষ-

১৯৫