পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 মহাদেব মুখুয্যে বললেন—ও খোকন তোমার নাম কি?

 খোকা বিস্ময় ও ভয় মিশ্রিত দৃষ্টিতে মহাদেব মুখুয্যের দিকে বড় বড় চোখ তুলে চাইলে। কোনো কথা বললে না।

 —কি নাম খোকন?

 —খোকন।

 —খোকন? বেশ নাম। বাঃ, ওহে, এবার হাতটা আমার—দানটা কি পড়লো?

 কিছুক্ষণ খেলা চলবার পরে সকলের জন্যে মুড়ি ও নারকোলকোরা এল বাড়ীর মধ্যে থেকে। খাবার খেয়ে আবার সকলে দ্বিগুণ উৎসাহে খেলায় মাতলো। এমন ভাবে খেলা করে এরা, যেন সেটাই এদের জীবনের লক্ষ্য।

 এমন সময় সত্যম্বর চাটুয্যের জামাই শ্রীনাথ ওদের চণ্ডীমণ্ডপে ঢুকলো। সে কলকাতায় চাকুরি করে, সুতরাং এ অঞ্চলের মধ্যে একজন মান্যগণ্য ব্যক্তি। এ গ্রামের কোনো ব্রাহ্মণই এ পর্যন্ত কলকাতা দেখেন নি। এমন কি স্বয়ং দেওয়ান রাজারাম পর্যন্ত এই দলের। কেন-না কোনো দরকার হয় না কলকাতা যাওয়ার, কেন যাবেন তাঁরা একটি অজানা শহরের সাত অসুবিধা ও নানা কাল্পনিক বিপদের মাঝখানে! ছেলেদের লেখাপড়ার বালাই নেই, নিজেদের জীবিকার্জনের জন্যে পরের দোরে ধন্না দিতে হয় না।

 ফণি চক্কত্তি বললেন—এসো বাবাজি, কলকেতার কি খবর?

 শ্রীনাথ অনেক আজগুবী খবর মাঝে মাঝে এনে দেয় এ গাঁয়ে। বাইরের জগতের খানিকটা হাওয়া ঢোকে এরই বর্ণনার বাতায়ন পথে। সম্প্রতি এখনি সে একটা আজগুবী খবর দিলে। বললে—মস্ত খবর হচ্চে, আমাদের বড়লাটকে একজন লোক খুন করেচে।

 সকলে একসঙ্গে বলে উঠলো—খুন করলে? কে খুন করলে?

 —একজন ওহাবি জাতীয় পাঠান।

 মহাদেব মুখুয্যে বলেন—আমাদের বড়লাট কে যেন ছিল?

 —লাড মেও।

২০০