পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জায়গা ঘুরে বেলা দ্বিপ্রহরের সময় সবাইপুর গ্রামের অম্বিকা মণ্ডলের বাড়ি গিয়ে ডাক দিলেন। অম্বিকা মণ্ডল বেগুনের চাষ করে, অবস্থা খুব খারাপ। ছেলেটির আজ কয়েক দিন জ্বর, ওষুধ নেই, পথ্য নেই। রামকানাই কবিরাজ খুব যত্ন ক’রে দেখে বললেন—এ নাড়ির অবস্থা ভালো না। একবার টাল খাবে—

 বাড়িশুদ্ধ সকলে মিলে কবিরাজকে সেদিনটা সেখানে থাকতে বললে। তখনো যে তাঁর খাওয়া হয় নি সেকথা কেউ জানে না, কেউ কিছু বললেও না। রামকানাই কবিরাজ না খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালকের শিয়রে বসে রইলেন। তারপর বাড়ি এসে সন্ধ্যা-আরাধনা ও রান্না করে রাত এক প্রহরের সময় আবার গেলেন রোগীর বাড়ি।

 রামকানাইয়ের নাড়িজ্ঞান অব্যর্থ। রাতদুপুরের সময় রোগী যায়-যায় হোলো। সুচিকাতরণ প্রয়োগ ক’রে টাল সামলাতে হোলো রামকানাইয়ের ওদের ঘরের মধ্যে জায়গা নেই, পিঁড়েতে একটা মাদুর দিলে বিছিয়ে। ভোর পর্যন্ত সেখানে কাটিয়ে তিনি পুনরায় রোগীর নাড়ি দেখলেন। মুখ গম্ভীর করে বললেন—এ রুগী বাঁচবে না। বিষম সান্নিপাতিক জর, বিকার দেখা দিয়েছে। আমি চললাম। আমাকে কিছু দিতে হবে না তোমাদের।

 এতটা পরিশ্রমের বদলে একটি কানাকড়িও পেলেন না রামকানাই, সেজন্য তিনি দুঃখিত নন, তার চেয়ে রোগীকে যে বাঁচাতে পারলেন না, বড় দুঃখ হ’লো তাঁর সেটাই।

 আজকাল একটি ছাত্র জুটছে রামকানাইয়ের। ভজন-ঘাটের অক্রুর চক্রবর্তীর ছেলে, নাম নিমাই, বাইশ তেইশ বছর বয়স। সে ঘরের বাইরে দূর্বাঘাসের ওপরে মাধব-নিদানের পুঁথি হতে বসে আছে। অধ্যাপক আসতেই উঠে দাঁড়িয়ে প্রণাম করলে।

 রামকানাই তাকে দেখে খুশি হয়ে বললেন—বাপ নিমাই, বোসো। নাড়ির ঘা কি রকম রে?

 —আজ্ঞে নাড়ির ঘা কি, বুঝতে পারলাম না।

 —ক’ঘা দিলে সঙ্কটের নাড়ি?

২২০