পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যাও। অত ভয় করিলে নীলকুঠি চালাইটে জানিবে না। ঠিক আছে।

 —যে আজ্ঞে হুজুর—

 —একটা কঠা শুনিয়া যাও। Are you sure there's as much as that? খবর লইয়া কি জানিলে?

 —সাহস দেন তো বলি হুজুর—মেমসায়েবের সঙ্গে করিম লাঠিয়াল আর পাইক যেন যায়। ষড়যন্ত্র অনেক দূর গড়িয়েচে—

 সাহেব শিস্‌ দিতে দিতে বললে—ও, this I never imagined possible! It will make me feel different—ইহা বিশ্বাস করা শক্‌ট। আচ্ছা, টুমি যাও। Leave everything to me—আমি যা-যা করিটে হইবে, সব করা হইবে, বুঝিলো?

 হরকালী সুর বহুদিন বহু সাহেব ঘেঁটে এসেচে, উলটো-পালটা ভুল বাংলা আন্দাজে বুঝে বুঝে ঘুণ হয়ে গিয়েচে।

 বললে—একটা কথা বলি হুজুর। আমার বন্দোবস্ত আমি করি, আপনার বন্দোবন্তু আপনি করুন। সেলাম, হুজুর—

 তিন দিন পরে বড় সাহেবের মেম নীলকুঠির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কুলতলার ঘাটে বজরায় চাপলো। সঙ্গে দশজন পাইকসহ করিম লাঠিয়াল, নিজে হরকালী সুর পৃথক নৌকায় বজরার পেছনে।

 পুরানো কর্মচারীদের মধ্যে প্রসন্ন চক্রবর্তী আমীন হাতজোড় করে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললে—মা, জগদ্ধাত্রী মা আমার! আপনি চলে যাচ্চেন, নীলকুঠি আজ অন্ধকার হয়ে গেল।…

প্রসন্ন আমীন হাউ হাউ ক’রে কেঁদে ফেললে।

 মেমসাহেব বললে—Don't you cry my good man-আমীনবাবু, কাঁদিও না—কেন কাঁদে?

 —মা, আমার অবস্থা কি করে গেলে? আমার গতি কি হবে মা? কার কাছে দুঃখু জানাবো, জগদ্ধাত্রী মা আমার—

 চতুর হরকালী সুর অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে হাসি চেপে রাখলে।

২২৭