পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অত্যাচার হচ্চে, তাই দেখতি আসচে। সব পেরজা খেপে গিয়েচে, যশোরনদে জেলায় একটা নীলির গাছ কেউ বুনবে না। তাই মোরা এসে দাঁড়িয়েচি ছোটলাট সায়েবরে জানাতি যে মোরা নীলচাষ করবো না—

 টুলু শুনে অবাক হয়ে নদীর দিকে চেয়ে রইল। খানিকটা কি ভেবে অন্নদাকে জিগ্যেস করলে—নীল কি দাদা?

 —নীল একরকম গাছ। নীলকুঠির সায়েব টম্‌টম্‌ হাঁকিয়ে যায় দেখিস নি?

 —কলের নৌকো দেখবো আমি—টুলু ঘাড় দুলিয়ে বললে।

 —চোদ্দ শাক তুলবি নে বুঝি? ওরে দুষ্টু—

 অন্নদা ওকে আদর করে এক টানে এতটুকু ছেলেকে কোলে তুলে নিলে।

 কিন্তু শুধু টুলু নয়, চোদ্দশাক তোলা উল্টে গেল সব ছেলেমেয়েরই। লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল নদীর দু’ধার। দুপুরের আগে ছোটলাট আসচেন কলের নৌকোতে। চাষী লোকেরা জিগীর দিতে লাগলো মাঝে মাঝে। গ্রামের বহু ভদ্রলোক—নীলমণি সমাদ্দার, ফণি চক্কত্তি, শ্যাম গাঙ্গুলী, আরও অনেকে এসে নদীর ধারের কদমতলায় দাঁড়ালো।

 ভবানী বাঁডুয্যে এসে ছেলেকে ডাকলেন—ও খোকা—

 টুলু হাসিমুখে বাবার কাছে ছুটে গিয়ে বললে—এই যে বাবা—

 —চোদ্দ শাক তুলেচিস? তোর মা বলছিল—

 —উহু বাবা। কে আসচে বাবা?

 —ছোটলাট সার উইলিয়াম গ্রে—

 —কি নাম? সার উইলিয়াম গ্রে?

 —বাঃ, এই তো তোর জিবে বেশ এসে গিয়েচে!

 —আমি এখন বাড়ি যাবো না। ছোটলাট দেখবো।

 —দেখিস এখন। বাড়ি যাবি, তোকে মুড়ি খাইয়ে আনি—

 —না বাবা। আমি দেখি।

 বেলা অনেকটা বাড়লো। রোদ চড়-চড় করচে। টুলুর খিদে পেয়েচে কিন্তু সে সব কষ্ট ভুলে গিয়েচে লোকজনের ভিড় দেখে।

২৩৯