পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 খোকা বললেও—বাবা—

 —কি রে?

 —কলের নৌকো কি রকম বাবা?

 —তাকে ইস্টিমার বলে। দেখিস এখন। ধোঁয়া ওড়ে—

 —খুব ধোঁয়া ওড়ে?

 —হুঁ।

 —কেন বাবা?

 —আগুন দেয় কিনা তাই।

 এমন সময় বহুদূরের জনতা থেকে একটা চীৎকার শব্দ উঠলো! টুলু বললে—বাবা আমাকে কোলে কর—

 ভবানী খোকাকে কাঁধে বসিয়ে উঁচু করে ধরলেন। বললেন—দেখতে পাচ্চিস?

 খোকা ঘাড় দুলিয়ে চোখ সামনে থেকে আদৌ না ফিরিয়ে বললে—হু—উ—উ—

 —কি দেখচিস?

 —ধোঁয়া উঠচে বাবা—

 —কলের নৌকো দেখতে পেলি?

 —না বাবা, ধোঁয়া—ওঃ, কি ধোঁয়া!

 অল্পক্ষণ পরে টুলুকে স্তম্ভিত ক’রে দিয়ে মস্ত বড় কলের নৌকোটা একরাশ ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ওর সামনে এসে উপস্থিত হোলো। জনতা “নীল মোরা করবো না লাটসায়েব, দোহাই মা মহারাণীর।” বলে চীৎকার ক’রে উঠলো। কলের নৌকোয় সামনে কাঠের কেদারায় বসে আছে অনেকগুলো সাহেব। নীলকুঠির যেমন একটা সাহেব নদীর ধারে পাখী মারছিল সেদিন অমনি দেখতে। ওদের মধ্যে একটা সাহেব ও কি করচে?

 টুলু বললে—বাবা—

 —চুপ কর—

 —বাবা—

২৪০