পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —সে কি আছে?

 —যাত্রা, হুজুর। সেজে এসে, এই ধরুন রাম, সীতা, রাবণ—

 —Oh understand, like a theatre. বেশ তুমি ঠিক কর—আমি টাকা দিবে।

 —কোথায় হবে?

 —হলঘরে হইটে পারে।

 —না হুজুর, বড় মাঠে পাল টাঙিয়ে আসর করতে হবে। গোবিন্দ অধিকারীর দল, অনেক লোক হবে।

 —টুমি লইয়া আসিবে।

 সেবার পূজার সময় এক কাণ্ডই হোলো গ্রামে। নীলকুঠিতে প্রকাণ্ড বড় দুর্গাপ্রতিমা গড়া হোলো। মনসাপোতার, বিশ্বম্ভর ঢুলি এসে তিন দিন বাজালে। গোবিন্দ অধিকারীর যাত্রা শুনতে সতেরোখানা গাঁয়ের লোক ভেঙে পড়লো।

 তিলু স্বামীকে বললে—শুনুন, নিলু যাত্রা দেখতে যাবে বলচে কুঠিতি।

 —সেটা কি ভালো দেখায়? মেয়েদের বসবার জায়গা হয়েচে কিনা—গাঁয়ের আর কেউ যাবে?

 —নিস্তারিণী যাবে বলছিল। নালু পালের বৌ তুলসী যাবে ছেলেমেয়ে নিয়ে—

 —তারা বড়লোক, তাদের কথা ছেড়ে দাও। নালু পালের অবস্থা আজকাল গ্রামের মধ্যে সেরা। তারা কিসে যাবে?

 —বোধহয় পালকিতি। ওর বড় পালকি, নিলু ওতে যেতে পারে।

 —গরুর গাড়ি ক’রে দেবো এখন। তুমিও যেও।

 —আমি আর যাবো না—

 —না কেন, যদি সবাই যায় তুমিও যাবে—

 খোকার ভারি আনন্দ অত বড় ঠাকুর দেখে অমন সুন্দর যাত্রা দেখে গাঁয়ের মেয়েরা কেউ যাবার অনুমতি পায় নি সমাজপতি৺চন্দ্র চাটুয্যের ছেলে কৈলাস চাটুয্যের।

২৪৪