পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার এই ভিজে শাড়ির। আজই দিয়েচে নতুন গয়না। ওরকম এ গারে আর কারো নেই। কালকেতা শহরে নতুন উঠেচে। ও গড়িয়ে এনে দিয়েচে। ওর মামাতো ভাই-কলকেতায় কোথায় যেন কাজ করে।

 নিস্তারিণী নিয়ে এসে দেখালে নতুন গয়না ভিজে কাপড়ের খুটি থেকে খুলে এনে। তিলু উল্টেপাল্টে দেখে বললে- নতুন জিনিস, ভালো জিনিস কিন্তু তুই এ জিনিস নিতি পারবি নে। এ তোকে ফেরত দিতি হবে। ফেরত দিয়ে বলবি, আর কখনো দেখা হবে না। এবার আমি এ কথা চেপে দেবো। আর তো কেউ দেখে নি, আমরাই দেখেচি। কারুরি বলতে যাবো না আমরা। কিন্তু তোমারে একরম মহাপাপ করতি দেবো না কিন্তু। স্বামীকে ভালো লাগে না তোমার? স্বামীর চোখে ধুলো দিয়ে-

 নিস্তারিণী মুখ নিচু ক'রে বললে-সে আমায় ভালোবাসে না-

 মেরে হাড় ভেঙ্গে দেবো। ভালোবাসবে কি ক’রে? উনি এখানে ওখানে-

 —তা না। আগে থেকেই। সে এ সব কিছু জানে না।

 —স্বামীকে ফাঁকি দিয়ে এসব করতি মনে মায়া হয় না?

 —তুমি দিদি স্বামী পেয়েচ শিবির মত। অমন শিবির মত স্বামী আমরা পেলি আমরাও অমন কথা বলতম। আহা-তিনি যে গুণবান। একখানা কাপড় চেয়েছিলাম বলে কি বকুনি, যেমন শাশুড়ীর, তেমনি সেই গুণবানের। বাপের বাড়ির একজোড়া গুজরীপঞ্চম ছিল, তা সেবার বাঁধা দিয়ে নালু পালের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল-আজও ফিরিয়ে আনার নাম নেই। এত বলি, কথা শোনে না। আনবে কোথা থেকি? ঐ তো সংসারের ছিরি! ধান এবার হয় নি, যা হয়েছিল তিনটে মাস টেনেটুনে চলেছিল। ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে দিয়ে কোমরে বাত ধরবার মত হয়েচে। এত করেও মন পাবার জো নেই কারো। কেন আমি থাকবো আমন শ্বশুরবাড়ি, বলে দাও তো দিদি।

 সুন্দরী বিদ্রোহিনীর মুখ রাঙা হয়ে উঠেচে। মুখে একটি অদ্ভুত গর্ব ও

২৫৬