পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সুখের অবস্থা গভীর দুঃখের পরে...দুঃখের পূর্বের সুখ অগভীর, তরল, খেলো হয়ে পড়ে। দুঃখের পরে যে সুখ-তাৱ নিৰ্মল ধারায় আত্মার স্নানযাত্রা নিম্পন্ন হয়, জীবনের প্রকৃত আস্বাদ বিলিয়ে দেয়। জীবনকে যারা দুঃখময় বলেছে, তারা জীবনের কিছুই জানে না, জগৎটাকে দুঃখর মনে করা নাস্তিকতা। জগৎ হোলো সেই আনন্দময়ের বিলাস বিভূতি। তবে দেখার মত মন ও চোখ দরকার। আজকাল তিনি কিছু কিছু বুঝতে পারেন।

 খোকা হাত উচু ক'রে বললে-বাবা,ভয় করাচে!

 —কেন রে?

 —শিয়াল! আমাকে কোলে নাও-

 —না। হেঁটে চলো-

 —তাহলে আমি কাঁদবো-

 তিলু বললে-বাবা, ভিজে কাপড় আমাদের দুজনেরই। সর্বশরীর ভেজাৰি কেন এই সন্দেবেলা। হেঁটে চলো।

 নিলু সন্দে দেখিয়ে বসে আছে। ভবানীর আহ্নিকের জায়গা ঠিক ক’রে রেখেছে। নিকোনো গুছোনো ওদের ঝকঝকে তকতকে মাটির দাওয়া। আহ্নিক শেষ করতেই নিলু এসে বললো-জলপান দিই এবার? তারপর সে একটা কাঁসার বাটিতে দুটি মুড়কি। আর দু'টুকরো নারকোল নিয়ে এসে দিলে, বললে—আমার সঙ্গে এবার একটু গল্প করতি হবে কিন্তু-

 —বোসে নিলু। কি রাঁধচ?

 —না, আমার সঙ্গে ও রকম গল্প না। চালাকি? দিদির সঙ্গে যেমন গল্প করেন-ওই রকম।

 —তোমার বড় হিংসে দিদির ওপর দেখচি। কি রকম গল্প শুনি-

 —সম্‌স্কৃতো-টম্স্কৃতো। ঠাকুরদেবতার কথা। ব্রহ্ম না কি-

 ভবানী হো হো ক’রে হেসে উঠে সস্নেহে ওর দিকে চাইলেন। বললেন-শুনতে চাও নি কোনোদিন তাই বলি নি। বেশ তাই হবে। তুমি জানো, কার মত করলে? প্রাচীন দিনে এক ঋষি ছিলেন, তার দুই স্ত্রী-গার্গী আর মৈত্রেয়ী

২৬৯