পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শ্রীচরণে ভার একবার গা তোলো হে অনন্ত।

 রামকানাই কবিরাজের বড় ভালো লাগলো গান শুনে। চোখ বুজে বললেন—আহা কি অনুপ্রাস। উঠে বার ভুবন জীবন, এ পাপ জীবনের জীবনান্ত, আহ-হা!

 উৎসাহ পেয়ে ভবানী বাঁড়ুয্যে তিলুকে দিয়ে আর একখানা গান গাওয়ালেন দাশরথি রায় কবিরঃ—

‘ধনি আমি কেবল নিদানে’

 তিলুর গলা মন্দ নয়। রামকানাই কবিরাজ বললেন—আজ্ঞে চমৎকার লিখচে দাশরথি রায়। কোথায় বাড়ি এঁর? না, এমন অনুপ্রাস, এমন ভাষা কখনো শুনি নি—বাঃ বাঃ

ওহে ব্রজাঙ্গনা কি কর কৌতুক
আমারি সৃষ্টি করা চতুর্মূখ
হরি বৈদ্য আমি হরিবারে দুখ,
ভ্রমণ করি ভুবনে।

 আমাকে লিখে দেবেন গানটা? ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা না থাকলে এমন লেখা যায় না—আহা-হা!

 ভবানী বললেন—বাড়ি বর্ধমানের কাছে কোথায়। ও বছর পাঁচালী গাইতে এসেছিলেন উলোতে বাবুদের বাড়ি। এ গান আমি সেখানে শুনি। খোকার মাকে আমি শিখিয়েচি।

 আর দু-একখানা গানের পর আসর ভেঙে দিয়ে সকলে জ্যোৎস্নার মধ্যে দিয়ে পাঁচপোতা গ্রামের দিকে রওনা হলো। চরপাড়ার বড় মাঠটা জ্যোৎস্নায় ভরে গিয়েচে, খালের জল চকচক করচে চাঁদের নিচে। ভবানী বাঁড়ুয্যে খালটা দেখিয়ে বললেন—ওই দ্যাখো তিলু, তোমার দাদা যখন নীলকুঠির দেওয়ান তখন এই খালের বাঁধাল নিয়ে দাঙ্গা হয়, তাতে মানুষ খুন করে নীলকুঠির লেঠেলরা। সেই নিয়ে খুব হাঙ্গামা হয় সেবার।

 হঠাৎ একটা লোককে মাঠের মধ্যে দিয়ে জোরে হেঁটে আসতে দেখে

৩১৫