পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই হলা পেকে খারাপ লোক, খুন রাহাজানি ক’রে বেড়ায়, কিন্তু এর মধ্যেও সেই তিনি। এ কোন্ হলা পেকে? এরা খারাপ? নিস্তারিণী খারাপ? এদের বিচার কে করবে? কার আছে সে বিচারের অধিকার? এক মহারহস্যময় মহাচৈতন্যময় শক্তি সবার অলক্ষ্যে, সবার অজ্ঞাতসারে সকলকে চালনা করে নিয়ে চলেচেন। কিলিয়ে কাঁটাল পাকান না তিনি। যার যেটা সহজ স্বাভাবিক পথ, সেই পথেই তাকে অসীম দয়ায় চালনা ক’রে নিয়ে যাবেন সেই পরম কারুণিক মাতৃপিতৃরূপা মহাশক্তি। এই হলা পেকে, এই নিস্তারিণী, কাউকে তিনি অবহেলা করবেন না। সবাইকে তাঁর দরকার।

 জন্মজন্মান্তরের অনন্ত পথহীন পথে অতি নীচ পাপীরও হাত ধরে অসীম ধৈর্যে অসীম মমতায় তিনি স্থির লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন। তাঁর এই ছেলের প্রতি যে মমতা, তেমনি সেই মহাশক্তির মমতা সমূদয় জীবকুলের প্রতি। কি চমৎকার নির্ভরতার ভাব সেই মুহূর্তে ভবানী বাঁড়ুয্যে মনের মধ্যে খুঁজে পেলেন সেই মহাশক্তির ওপর। কোনো ভয় নেই, কোনো ভয় নেই। মাভৈঃ। স্তনন্ধয়ানাং স্তনদুগ্ধপানে, মধুব্রতানাং মকরন্দপানে—নেই কি তিনি সর্বত্র? নেই কোথায়?


 দেওয়ান হরকালী সুর লালমোহন পালের গদিতে বসে বসে নীলকুঠির চাষকাজের হিসেব দিচ্ছিলেন। বেলা দুপুর উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েচে। লালমোহন পাল এললেন খাস খামারের হিসেবটা ওবেলা দেখলে হবে না দেওয়ানমশাই? বড্ড বেলা হোলো। আপনি খাবেন কোথায়?

 —কুঠিতে।

 —কে রাঁধবে?

 —আমাদের নরহরি পেশ্‌কার। বেশ রাঁধে।

 কথায় কথায় লালমোহন পাল বলেন,—ভালো কথা, আমার স্ত্রী আর ভগ্নী একদিন কুঠি দেখতে চাচ্চে, ওরা ওর ভেতর কখনো দেখে নি।

 —যাবেন, কালই যাবেন। আমি সব বন্দোবস্ত করে দিচ্চি। কিসি যাবেন?

৩১৮