কুমোরদের বাজরা পুরে কুড়িয়ে আনতে হবে বাঁশবাগান থেকে। সারা বছর উনুন ধরাতে হবে তাই দিয়ে। চিঁড়ে ঝাড়তে বাড়তে দু’হাত ব্যথায় টনটন করবে। কথা শেষ করে নিরি বললে—সে তুই পারবি নে, পারবি নে! পিসিমা তোরে মানুষ করে গিয়েল অন্যভাবে। তোর আখের নষ্ট ক’রে রেখে গিয়েচে। না হলি মেমসায়েব, না হলি বাগ্দিঘরের ভাঁড়ারি মেয়ে! কি ক’রে তুই চালাবি? দুকুল হারালি।
গয়া আর কোনো কথা বললে না।
তার নিজের কপালের দোষ। কারো দোষ নয়! এরা দিন পেয়েচে, এখন বলবেই। আর কারো কাছে দুঃখু জানাবে না সে। এরা আপনজন নয়। এরা শুধু ঠেস্ দিয়ে কথা বলে মজা দেখবে।
নীরি বললে-দোক্তা খাবি?
—না ভাই।
—ঘুম আসচে?
—এবার একটু ঘুমুই।
—তোমার সুখের শরীল। রাত জাগা অভ্যেস থাকতো আমাদের মত তো ঠ্যালাটি বুঝতে! পূজোর সময় পরবের সময় সারারাত জেগে চিড়ে কুটিচি, ছাতু কুটিচি, ধান ভেনেচি। নইলে খদ্দের থাকে? রাত একটু জাগতি পারো না, তুমি আবার পাঁচাদরে ধান ভানবা, তবেই হয়েচে!
গয়া খুব বেশি ঝগড়া করতে পারে না। সে অভ্যাস তার গড়ে ওঠে নি পাড়াগাঁয়ের মেয়েদের মত। নতুবা এখুনি তুমুল কাণ্ড বেধে যেতো নীরির সঙ্গে। একবার ইচ্ছে হলো নীরির কুটুনির সে উত্তর দেবে ভালো করেই। কিন্তু পরক্ষণেই তার বহুদিনের অত্যন্ত ভদ্রতাবোধ তাকে বললে, কেন বাজে চেঁচামেচি করা? ঘুমিয়ে পড়ো, ও যা বলে বলুক গে! ওর কথায় গায়ে ঘা হয়ে যাবে না। নীরি কি জানবে মনের কথা?
প্রসন্ন খুড়োমশায়ের সঙ্গে কতকাল দেখা হয় নি। কোথায় চলে গিয়েচেন নীলকুঠির কাছারীতে বরখাস্ত হয়ে। তবুও একজন লোক ছিল, অসময়ে