ভালো নয়, বেশ একটু ঝগড়াটে, বাল্যকাল থেকেই একটু আদুরে। পান থেকে চুন খসলে তখুনি সতেরো কথা শুনিয়ে দেবে বৌদিকে।
কিন্তু তুলসী কখনো ব্যাজার হয় না। অসাধারণ সহ্যগুণ তার। যেমন আজই হোলো। হঠাৎ মুড়ি খেতে খেতে তুলসীর মেয়ে হাবি ময়নার ছোট ছেলের গালে এক চড় মারলে। ছেলেতে ছেলেতে ঝগড়া, তাতে ময়নার যাবার দরকার ছিল না। সে গিয়ে বললে—কি রে, কেষ্টকে মারলে কেডা?
সবাই বলে দিলে, হাবি মেরেচে, মুড়ি নিয়ে কি ঝগড়া বেধেছিল দুজনে।
ময়না হাবিকে প্রথমে দুড়দাড় ক’রে মারলে, তারপর বকতে শুরু করলে—তোর বড্ড বাড় হয়েচে, আমার রোগা ছেলেটার গায়ে হাত তুলিস, ওর শরীলি আছে কি? ও মরে গেলে তোমাদের হাড় জুড়োয়। এতে মায়েরও আস্কারা আছে কিনা, নইলে এমন হতি পারে?
তুলসী শুনে বাইরে এসে বললে—হ্যাঁ ঠাকুরঝি, আমার এতে কি আস্কারা আছে? বলি, আমি বলবো তোমার ছেলেকে মারতি, কেন সে কি আমার পর?
ময়না ইতরের মত ঝগড়া শুরু করে দিলে। শেষকালে রোগা ছেলেটাকে ঠাস ঠাস ক’রে গোটাকতক চড় বসিয়ে বললে—মর না তুই আপদ। তোর জন্যিই তো দাদার পয়সা খরচ হচ্চে বলে ওদের এত রাগ। মরে যা না—
তুলসী অবাক হয়ে গেল ময়নার কাণ্ড দেখে। সে দৌড়ে গিয়ে ছেলেটাকে কোলে তুলে নিয়ে বললে—খেপলে না পাগল হ’লে? কেন মেরে মরচিস রোগ ছেলেটাকে অমন ক’রে? আহা, বাছার পিঠটা লাল হয়ে গিয়েচে!
ময়নাও সুর চড়িয়ে বলতে লাগলো—গিয়েচে যাক। আর অত দরদ দেখাতি হবে না, বলে মা’র চেয়ে যার দরদ তারে বলে ডান!…দ্যাও তুমি ওকে নামিয়ে—
তুলসী বললে—না, দেবো না। আমার চকির সামনে রোগা ছেলেডারে তুমি কক্ষনো গায়ে হাত দিতি পারবা না—ছেলেটাকে কোলে ক’রে তুলসী নিজের ঘরে ঢুকে খিল দিল।
বেশি বেলায় লালমোহন পাল আড়ত থেকে বাড়ি ফিরে দেখলে তুলসী