ক’রে গিয়েছিলেন। তুলসী সেকথা তোলে নি। নন্দরাণীকে বললে—যখন যা দরকার হবে, আমায় এসে বলবেন ভাই। এতো লজ্জা করবেন না। পর না ভেবে এসেচেন যে, মনডা খুশি হেলো বড্ড। আর একটা পান খান—দোক্তা চলবে? না? স্বর্ণদিদি ভালো আছেন?…
নন্দরাণী টাকা নিয়ে খুশিমনে বাড়ি চলে গেল সেদিন সন্দের আগেই। ঝিকে তুলসী বললে—ষষ্ঠীতলা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আয় দিদিকে—
তিলু ও নিলু তেঁতুল কুটছিল বসে বসে। চৈত্র মাসের অপরাহ্ন। একটা খেজুরপাতার চেটাই বিছিয়ে তার ওপর বসে নিলু তেঁতুল কুটছিল, তিলু সেগুলো বেছে বেছে একপাশে জড়ো করছিল।
—কোন্ গাছের তেঁতুল রে?
—তা জানিনে দিদি। গোপাল মুচির ছেলে ব্যাংটা পেড়ে দিয়ে গেল।
—গাঙের ধারের?
—সে তো খুব মিষ্টি। খেয়ে দ্যাখ্ না!
তিলু একখানা তেঁতুল মুখে ফেলে দিয়ে বললে—বাঃ, কি মিষ্টি! গাঙের ধারের ওই বড় গাছটার!
—তাড়াতাড়ি নে দিদি। খোকা পাঠশালা থেকে এল বলে। এলেই মুখি পুরবে।
—হ্যারে, বিলুর কথা মনে পড়ে? তিনজনে বসে তেঁতুল কুটতাম এরকম, মনে পড়ে?
—খুব।
দুই বোনই চুপ ক’রে রইল। অনেক কথাই মনে পড়ে। এই তো কয়েক বছর হোল বিলু মারা গিয়েচে। মনে হচ্চে, কত দিন, কত যুগ। এই সব চৈত্র মাসের দুপুরে বাঁশবনের পত্র-মর্মরে, পাপিয়ার উদাস তাকে যেন পুরাতন স্মৃতি ভিড় ক’রে আসে মনের মধ্যে। বাপের মত দাদা—মা-বাবা মারা যাওয়ার পরে যে দাদা, যে বৌদিদি বাবা-মায়ের মতই তাদের মানুষ করেছিলেন,