পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করতে এলেন নালু পালের সঙ্গে।

 রামহরি চক্রবর্তীর বয়স পঞ্চান্ন-ছাপ্পান্ন হবে, বেঁটে, কালো, একমুখ দাড়ি গোঁফ। মাথার টিকিতে একটি মাদুলি। বাহুতে রামকবচ। বিদ্যা ঐ গ্রামের সেকালের হরু গুরুমশায়ের পাঠশালার নামতার ডাক পর্যন্ত। তিনি ছিলেন ঘোষার সর্দার। অর্থাৎ নামতা ঘোষবার বা চেঁচিয়ে ডাক পড়াবার তিনিই ছিলেন সর্দার।

 রামহরি সব শুনে বললেন—এই সাতকড়ি ভায়াও আছে। পালমশায়, আপনি ধনী লোক, আমরা সব জানি। কিন্তু আপনার বাড়িতে পাতা পাড়িয়ে ব্রাহ্মণ খাওয়ানো, এ কখনো এ দেশে হয় নি। তবে তা আমরা দুজনে করিয়ে দেবো। কি বল হে সাতকড়ি?

 সাতকড়ি ঘোষাল অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সের লোক, তবে বেশ ফর্সা আর একটু দীর্ঘাকৃতি। কৃশকায়ও বটে। মুখ দেখে মনে হয় নিরীহ, ভালোমানুষ, হয়তো কিছু অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি, সাংসারিক দিক থেকে।

 সাতকড়ি মাথা নেড়ে বললেন—কথাই তাই।

 —তুমি কি বলচ?

 —আপনি যা করেন দাদা।

 —তা হলে আমি বলে দিই?

 —দিন।

 নালু পালের দিকে ফিরে রামহরি ডানহাতের আঙুলগুলো সব ফাঁক করে তুলে দেখিয়ে বললেন—পাঁচ টাকা ক’রে লাগবে আমাদের দুজনের।

 —দেবো।

 —ব্রাহ্মণদের ভোজন-দক্ষিণে দিতি হবে এক টাকা।

 —ওইটে কমিয়ে আট আনা করতি হবে।

 —আর এক মালসা ছাঁদা দিতি হবে—লুচি, চিনি, নারকেলের নাড়ু। খাওয়ার আগে।

 —তাও দেবো, কিন্তু দক্ষিণেটা আট আনা করুন।

৩৪৮