পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আপনারে? ভাত ছড়ালি কাকের অভাব?

 নালুপাল সঙ্কুচিত হয়ে হাত জোড় ক’রে বললে—ছি ছি, ও কথা বলবেন না! ওতে আমার অপরাধ হয়। আমার কত বড় ভাগ্যি আজকে, যে আজ আমার বাড়ি আপনাদের পায়ের ধুলো পড়লো। আপনাদের দালালি নিয়ে যান। ক্ষ্যামতা আছে আপনাদের।

 —কিছু ক্ষ্যামতা নেই। এ ক্ষ্যামতার কথা না পালমশাই। সত্যি কথা আর হক কথা ছাড়া রামহরি বলে না। তেমন বাপে জম্মো দেয় নি। লুচি চিনির ফলার এ অঞ্চলে ক’দিন ক’জনে খাইয়েচে শুনি? ঐ নাম শুনে সবাই ছুটে এসেচে। এ গাঁয়ের কেউ বুঝি আসে নি? তা আসবে না। এদের পায়া ভারি অনেক কিনা!

 —একজন এসেচেন, ভবানী বাঁড়ুয্যে মশায়।

 রামহরি আশ্চর্য হয়ে বললেন—কি রকম কথা! দেওয়ানজির জামাই?

 —তিনিই।

 —আমার সঙ্গে একবার আলাপ করিয়ে দ্যান না পালমশাই?

 সব ব্রাহ্মণের খাওয়া চুকে যাওয়ার পরে ভবানী বাঁড়ুয্যে খোকাকে নিয়ে নিরিবিলি জায়গায় বসে আহার করছিলেন। খোকা জীবনে লুচি এই প্রথম খেলে। বলছিল—এরে নুচি বলে বাবা?

 —খাও বাবা ভালো ক’রে। আর নিবি?

 বালক ঘাড় নেড়ে বললে—হু।

 ভবানীর ইঙ্গিতে তিলু খানকতক গরম লুচি খোকার পাতে দিয়ে গেল। ভবানীকে তিলু ও নিলুই খাবার পরিবেশন করছিল। এমন সময় নালু পাল সেখানে রামহরি চক্রবর্তীকে নিয়ে ঢুকে ভোজনরত ভবানীর সামনে অথচ হাত-দশেক দূরে জোড়হাতে দাঁড়ালো।

 —কি?

 —ইনি এসেছেন আপনার সঙ্গে আলাপ করতি।

 রামহরি চক্রবর্তী প্রণাম ক’রে বললেন—দেখে বোঝলাম আজ কার মুখ

৩৫০