পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাসন-মাজা চাকর, সমানে সমানে আজ খোশগল্প করতে এসেচে একগাল দাঁত বার করে তার সঙ্গে। চেনে না সে প্রসন্ন আমীনকে? দিন চলে গিয়েচে, আজ বিষহীন ঢোঁড়া সাপ প্রসন্ন চক্কত্তি এ কথার উত্তর কি করে দেবে? সে মোল্লাহাটির নীলকুঠি নেই,সে বড়সায়েব শিপ্‌টনও নেই, সে রাজারাম দেওয়ানও নেই।

 নীলকুঠির আমলে শাসন বলে জিনিস ছিল, লোকে ভয়ে কাঁপতো লাল মুখ দেখলে, এসব দিশী জমিদারের কাছারীতে ভূতের কেত্তন। কেউ কাকে মানে? মারো দুশো ঝাঁটা।

 বিরক্তি সহকারে আমীন রতিলালের কত্তার উত্তরে বললে—ও। নীরস কণ্ঠেই বলে।

 রতিলাল বললে—তেল মাখচেন?

 —হু।

 —নাইতি যাবেন?

 —হু।

 —কি রান্না করবেন ভাবচেন?

 —কি এমন আর? ডাল আর উচ্ছেচচ্চড়ি। ঘোল আছে।

 —ঘোল না থাকে দেবানি। সনকা গোয়ালিনী আধ কলসী মাঠাওয়ালা ঘোল দিয়ে গিয়েচে। নেবেন?

 —না, আমার আছে।

 বলেই প্রসন্ন চক্কত্তি রতিলালকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি গামছা কাঁধে নিয়ে ইছামতীতে নাইতে চলে গেল। কি বিপদই হয়েছে। ওর সঙ্গে এখন বক্‌ বক্‌ করো বসে বসে। খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই। ব্যাটা বেয়াদবের নাজির কোথাকার।

 রান্না করতে করতেও ভাবে, কতদিন ধরে সে আজ একা রান্না করচে। বিশ বছর? না, তারও বেশি। স্ত্রী সরস্বতী সাধনোচিত ধামে গমন করেচেন বহুদিন। তারপর থেকেই হাঁড়িবেড়ি হাতে উঠেচে। আর নামলো কই? রান্না করলে

৩৬২