পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেবে? কেউ নেই। সামনে অন্ধকার। যেমন অন্ধকার ওই বাঁশঝাড়ের তলায় তলায় জমে আসবে আর একটু পরে।

 রাহাতুনপুর পৌঁছে গেল ঘোড়া তিন ঘণ্টার মধ্যে। প্রায় এগারো ক্রোশ পথ। এখানে সকলেই ওকে চেনে। নীলকুঠির আমলে কতবার এখানে সে আর কারকুন আসতো নীলের দাগ মারতি। এখানে একবার দাঙ্গা হয় দেওয়ান রাজারাম রায়ের আমলে। খুব গোলমাল হয়, জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট এসেছিলেন প্রজাদের দরখাস্ত পেয়ে।

 বড় মোড়ল আবদুল লতিফ মারা গিয়েচে, তার ছেলে সামসুল এসে প্রসন্ন চক্কত্তিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেল। বেলা এখনো দণ্ড-দুই আছে। বড় রোদে ঘোড়া ছুটিয়ে আসা হয়েচে।

 সামসুল বললে—সালাম, আমীনমশায়। আজকাল কনে আছেন?

 —তোমাদের সব ভালো? আবদুল বুঝি মারা গিয়েচে? কদ্দিন? আহা, বড্ড ভালো লোক ছিল। আমি আছি বাহাদুরপুরি। বড্ড দূর পড়ে গিয়েচে, কাজেই আর দেখাশুনো হবে কি করে বলো।

 —তামাক খান। সাজি।

 —নকুড় কাপালী কোথায় আছে জানো? তাকে পাই কোথায়?

 —বাঁওড়ের ধারে যে খড়ের চালা আছে, জরীপির সময় আমীনের বাসা হয়েল, সেখানে আছেন। ঠেকোয়।

 প্রসন্ন চক্কত্তি অনেকক্ষণ থেকে কিন্তু একটা কথা ভাবচে। পুরনো কুঠিটা আবার দেখতে ইচ্ছে করে।

 বেলা পড়ে এসেছে। সন্ধ্যার দেরি নেই। মোল্লাহাটির নীলকুঠি এখান থেকে তিন ক্রোশ পথ। ঘোড়া ছুটিয়ে গেলে এক ঘণ্টা। সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে যাবে ঘোড়া। খানিক ভেবেচিন্তে ঘোড়ায় চড়ে সে রওনা হোলো মোল্লাহাটি। অনেকদিন সেখানে যায় নি। ধুঁধুঁল বনে হলদে ফুল ফুটেছে, জিউলি গাছের আটা ঝরচে কাঁচা কদমার শাকের মত। হু হু হাওয়া ফাঁকা মাঠের ওপার থেকে মড়িঘাটার বাঁওড়ের কুমুদ ফুলের গন্ধ বয়ে আনচে। শেঁয়াকুল কাঁটার

৩৬৭