কবরটা। কিন্তু কি ওটা নড়চে সাদা মতন? বড়সাহেব শিপ্টনের কবরখানায় লম্বা লম্বা উলুখড়ের সাদা ফুলগুলোর আড়ালে?
নির্জন কুঠির পরিত্যক্ত কবরখানা, অস্পষ্ট জ্যোৎস্নায় ঢাকা। প্রেত-যোনির ছবি স্বভাবতই মনে না এসে পারে না, যতই সাহসী হোক আমীন প্রসন্ন চক্রবর্তী। সে ভীতিজড়িত আড়ষ্ট অস্বাভাবিক সুরে বললে—কে ওখানে? কে ও? কে গা?
শিপ্টন্ সাহেবের সমাধির উলুখড়ের ফুলের ঢেউয়ের আড়াল থেকে একটি নারীমূর্তি চকিত ও ত্রস্তভাবে উঠে দাঁড়িয়ে রইল অস্পষ্ট জ্যোৎস্নায় পাথরের মূর্তিরই মত।
—কে গা? কে তুমি?
—কে? খুড়োমশাই! ও খুড়োমশাই!
ওর কণ্ঠে অপরিসীম বিস্ময়ের সুর। আরও এগিয়ে এসে বললে—আমি গয়া। প্রসন্নর মুখ দিয়ে খানিকক্ষণ কোনো কথা বার হোলা না বিস্ময়ে। সে তাড়াতাড়ি রেকাবে পা দিয়ে নেমে পড়লো ঘোড়া থেকে, আহ্লাদের সুরে বললে—গয়া! তুমি! এখানে? চলো চলো, বাইরে চলে, এ জঙ্গল থেকে—এখানে কোথায় এইছিলে?
জ্যোৎস্নায় প্রসন্ন দেখলে গয়ার চোখের কোণে জলের রেখা। এর আগেই সে কাঁদছিল ওখানে বসে বসে এই রকম মনে হয়। কান্নার চিহ্ন ওর চোখেমুখে চিকচিকে জ্যোৎস্নায় সুস্পষ্ট।
প্রসন্ন চক্কত্তি বললে—চলো গয়া, ওই দিকে বার হয়ে চলো—এঃ, কি ভয়ানক জঙ্গল হয়ে গিয়েচে এদিকটা!
গয়ামেম ওর কথায় ভালো করে কর্ণপাত না করে বললে—আসুন খুড়ো মশাই, বড়সায়েবের কবরটা দেখবেন না? আসুন। আলেন যখন, দেখেই যান—
পরে সে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। শিপ্টনের সমাধির ওপর টাটকা সন্ধ্যা-মালতী আর কুঠির বাগানের গাছেরই বকফুল চড়ানো। তা থেকে এক গোছা সন্ধ্যামালতী তুলে নিয়ে ওর হাতে দিয়ে বললে—দ্যান, ছড়িয়ে দ্যান।