পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তবে এমন করলে প্রজা শাসন করা যায় না।

 —কি হবে না?

 —প্রজা জব্দ করা যাবে না। নীলের চাষ হবে না। হুজুর।

 —নীলের চাষ হবে না টবে টোমাকে কি জন্য রাখা হইল?

 —সে তো ঠিক হুজুর। আমাকে প্রজাদের সামনে অপমান করা হোলে আমার কাজ কি করে হয় বলুন হুজুর-

 —অপমান? ওহো, ইউ আর ইন ডিসগ্রেস ইউ ওল্ড স্কাউণ্ডেল, আই আণ্ডারস্ট্যাণ্ড। টোমাকে কি করিটে হইবে?

 —আপনি বুঝুন হুজুর। নবু গাজি বলে একজন বদমাইশ প্রজার জমিতে দাগ মেরেছিলাম, উনি হুকুম দিয়েচেন জমি ছেড়ে দিতে। ও গায়ে আর কোনো জমিতে হাত দেওয়া যাবে না। নীলের চাষ হবে কি করে?

 —কটো জমি এ বছর ভাগ দিয়াছ, আমাকে কাল ডেখাটে হইবে। ইমপ্রেশন রেজিস্টার টৈরি করিয়াছ?

 —হাঁ হুজুর।

 —যাও। না ডেখাইতে পারিলে জরিমানা হইবে। কাল লইয়া আসিবে।

 বাস্, কাজ মিটে গেল। প্রসন্ন চক্কতির কাছে মুখ ভাবী করে ফিরে গেলেন রাজারাম। -না কিছুই হোল না। ওরা নিজের জাতের মান-অপমান আগে দেখে। পাজি শূওরখোর জাত কিনা। তোমার আমার অপমানে ওদের বয়েই গেল।

 প্রসন্ন চক্কত্তি ঘুঘু লোক। আগেই জানতেন কি হবে। তামাক টানতে টানতে বললেন অপমানং পুরস্কৃত্য মানং ক্লত্বা চ পষ্টকে-ছেলেবেলায় চাণক্য শ্লোকে পড়েছিলাম দেওয়ানজি। ওদেব কাছে এসে মান-অপমান দেখতে গেলে চলবে না। তা যান, আপনি আপনাব কাজে যান-

 —আবার উল্টে জরিমানার ব্যবস্থা-

 —সে কি! জরিমানা করে দিলে নাকি?

 —সৌজন্যে জরিমানা নয়। দাগের খতিয়ান হাল সনের তৈরি হয়েচে কিনা,

৩৫