পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ও পাশাপাশি হেঁটে বেড়াবে এ গাঁয়ের পথে—কেউ কিছু মনে করবে না।

 নালু পাল একখানা দোকান করেচে। ইছামতী থেকে যে বাঁওড় বেরিয়েছে, এটা ইছামতীরই পুরনো খাত ছিল একসময়ে। এখন আর সে খাতে স্রোত বয় না, টোপাপানার দাম জমেচে। নালু পালের দোকান এই বাঁওড়ের ধারে, মুদির দোকান একখানা ভালোই চলে এখানে, মোল্লাহাটির হাটে মাথায় ক'রে জিনিস বিক্রি করবার সময়ে সে লক্ষ্য করেছিল।

 নালু পালের দোকানে খদ্দের এল। জাতে বুনো, এদের পূর্বপুরুষ নীলকুঠির কাজের জন্যে এদেশে এসেছিল সাঁওতাল পরগণা থেকে। এখন এরা বাংলা বেশ বলে, কালীপূজো মনসাপূজো করে, বাঙালী মেয়ের মত শাড়ী পরে।

 একটি মেয়ে বললে—দু’পয়সার তেল আর মুন দ্যাও গো। মেঘ উঠেচে, বিষ্টি আসবে—

 একটি মেয়ে আঁচল থেকে খুললে চারটি পয়সা। সে কড়ি ভাঙাতে এসেচে। এক পয়সায় পাঁচগণ্ডা কড়ি পাওয়া যায়—আজ সবাইপুরের হাট, কড়ি দিয়ে শাক বেগুন কিনবে।

 নালু পাল আজ বড় ব্যস্ত। হাটবারের দিন আজ, সবাইপুর গ্রাম এখান থেকে আধমাইল, সব লোক হাটের কেৱত ওর দোকান থেকে জিনিস কিনে নিয়ে যাবে। পয়সার বাক্স আলাদা, কড়ির বাক্স আলাদা-সে শুধু জিনিস বিক্রি করে নির্দিষ্ট বাক্সে ফেলছে।

 এখানে বসে সে সস্তায় হাট করে। একটি মেয়ে লাউশাক বিক্রি করতে যাচ্ছে, নালু পাল বললে-শাক কত?

 —আট কড়া।

 —দুর, ছ’ কড়া কালও কিনিচি। শাক আবার আটকড়া! কখনো বাপের জন্মে শুনিনি। দে ছ'কড়া ক'রে।

 —দিলি বড় খেতি হয়ে যায় যে-টাটকা শাক, এখুনি তুলি নিয়ে অ্যালাম।

 —দিয়ে যা রে বাপু। টাটকা শাক ছাড়া বাসি আবার কে বেচে?

৫৬