পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দু’ট্যাকা নিয়ে যাও। কাল বাকিটা নেবে।

 মাছ কিনে কেউ বিশেষ সন্তুষ্ট হোল না, কারণ অক্রুর মাঝিকে এরা বেশি ঠকাতে পারে নি। ন্যায্য দাম যা হাটেবাজারে তার চেয়ে না হয় আনা-আটেক কম হয়েছে।

 নালু পাল বললে—কে কে ভাগ নেবা, তৈরী হও। নগদ পয়সা। ফ্যালো কড়ি, মাখো তেল, তুমি কি আমার পর?

 পাঁচ-ছ'জন নগদ দাম দিয়ে মাছ কিনতে রাজী হোল। সবাই মিলে মাছটা কেটে ফেললে দোকানের পেছনে বাঁশতলার ছায়ায় বসে। এক-একখানা মানকচু পাতা যোগাড় করে এনে এক এক ভাগ মাছ নিয়ে গেল প্রত্যেকে।

 নালু পাল নিলে এক ভাগের অর্ধেকটা।

 অক্রুর জেলে বললে—পাল মশায়, অর্ধেক কেন, পুরো নিলে না?

 —না হে, দোকানের অবস্থা ভালো না। অত মাছ খেলেই হোল।

 —তোমরা তো মোটে মা ছেলে, একটা বুঝি বোন। সংসারে খরচ কি?

 —দোকানটাকে দাঁড় না করিয়ে কিছু করচি নে দাদা।

 —বৌ নিয়ে এসো এই সামনের অঘ্রাণে। আমরা দেখি।

 ~~ব্যবসা দাঁড় করিয়ে নিই আগে। সব হবে;

 নালু পাল আর কথা বলতে সময় পেলে না। দোকানে ও বড় ভিড় জমে গেল। কড়ির খদ্দের বেশী, পয়সার কম। টাকা ভাঙাতে এলো না একজনও। কেউ টাকা বার করলে না। অথচ রাত আটটা পর্যন্ত দলে দলে খদ্দেরের ভিড় হোল ওর দোকানে। ভিড় যখন ভাঙলো তখন রাত অনেক হয়েছে।

 এক প্রহর রাত্রি।

 তবিল মেলাতে বসলো নালু পাল। কড়ি গুনে গুনে একদিকে, পদ্মা আর একদিকে। দু' টাকা সাত আন পঁচি কড়া।

 নালু পাল আশ্চর্য হয়ে গেল। এক বেলায় প্রায় আড়াই টাকা বিক্রি। এ বিশ্বাস করা শক্ত। সোনার দোকানটুকু। মা সিদ্ধেশ্বরী কুপায় এই না এই

৬০