পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 একটু পরে নিলু ঘরে ঢুকলো খোকনকে কোলে নিয়ে। ওর কোলে ঘুমন্ত খোকন। খোকনের গলায় হলা পেকের উপহার দেওয়া সেই হার ছড়াটা। অতি সুন্দর খোকন। ভবানী বাঁড়ুয্যে এমন খোকা কখনো দেখেন নি। এত সুন্দর ছেলে এবং এত চমৎকার তার হাবভাব। এক এক সময় আবার ভাবেন অন্য সবাই তাদের সন্তানদের সম্বন্ধে ঠিক এই কথাই বলবে না কি? এমন কি খুব কুৎসিত সন্তানদের বাপ-মাও? তবে এর মধ্যে অসত্য কোথায় আছে? নিলু খোকাকে সন্তর্পণে শুইয়ে দিলে, ভবানী চেয়ে চেয়ে দেখলেন—কি সুন্দর ভাবে ওর বড় বড় চোখ দুটি বুজিয়ে ঘুমে নেতিয়ে আছে খোকন। তিনি আস্তে আস্তে সেই অবস্থায় তাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিতেই খোকা নিমীলিত চোখেই বুদ্ধদেবের মত শান্ত হয়ে রইল, কেবল তার ঘাড়টি পিছন দিকে হেলে পড়তে দেখে ভবানী পিছন থেকে একটা হাত দিয়ে ওর ঘাড় ধ’রে রাখলেন। নিলু তাড়াতাড়ি এসে বললে—ওকি? ওর ঘাড় ভেঙে যাবে যে! কি আক্কেল আপনার?

 ভবানীর ভারি আমোদ লাগলো, কেমন সুন্দর চুপটি করে চোখ বুজে একবারও না কেঁদে কেষ্টনগরের কারিগরের পুতুলের মত বসে রইল।

 নিলুকে বললেন—দ্যাগো দ্যাখো কেমন দেখাচ্ছে—তিলুকে ডাকো—তোমার দিদিকে ডাকো—

 নিলু বললে—আহা-হা মরে যাই। কেমন ক’রে চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছে, কেন ওকে অমন কষ্ট দিচ্ছেন? ছি ছি—শুইয়ে দিন—

 তিলু এসে বললে—কি?

 —দ্যাখো কেমন দেখাচ্চে খোকনকে?

 —আহা বেশ!

 —মুখে কান্না নেই, কথা নেই।

 —কথা থাকবে কি? ও ঘুমে অচেতন যে। ও কি কিছু বুঝতে পাচ্চে, ওকে বসানো হয়েছে, কি করা হয়েচে?

 নিলু বললে—এবার শুইয়ে দিন। আহা মরে যাই, সোনামণি আমার—

৮২