পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

এই বিচিত্র জনশ্রুতি এবং জীর্ণ উপকরণ মূলক ইতিহাসে এমন অনেকটা অংশই থাকে যাহার প্রমাণ অপ্রমাণ ঐতিহাসিকের ব্যক্তিগত প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। দুই সাক্ষীর মধ্যে কোন্ সাক্ষীকে বিশ্বাস করিব তাহা অনেক সময়ে কেবলমাত্র বিচারকের স্বভাব ও পূর্ব-সংস্কারের দ্বারা স্থিরীকৃত হয়। ইংরাজ সাক্ষী মিথ্যা বলে না, ইংরাজ জজ ইহা কতকটা স্বভাবত এবং কতকটা টানিয়াও বিশ্বাস করেন। এই প্রবৃত্তি ও বিশ্বাসবশত তাঁহারা অন্যদেশীয়দের প্রতি অনেক সময়ে অবিচার করিয়া থাকেন তাহা ইংরাজ ব্যতীত আর-সকলেই অনুভব করিতে পারেন।

 ইতিহাসে এই প্রকার ব্যক্তিগত সংস্কারের লীলা যখন অবশ্যম্ভাবী তখন এই কথা সহজেই মনে উদয় হয়, আমরা ক্রমাগত বিদেশীয় ঐতিহাসিকের বিজাতীয় সংস্কারের দ্বারা গঠিত ইতিহাস-পাঠের পীড়ন কেন সহ্য করিব? আমরা যে ইতিহাস সংকলন করিব তাহাও যে বিশুদ্ধ সত্য হইবে এ আশা করি না, কিন্তু ইতিহাসের যে অংশ প্রমাণ অপেক্ষা ঐতিহাসিকের মানসিক প্রকৃতির উপর বেশি নির্ভর করে সে অংশে আমাদের স্বজাতীয় প্রকৃতির সৃজনকর্তৃত্ব আমরা দেখিতে চাই।

 তাহা ছাড়া, ইতিহাস একতর্‌ফা না হইয়া দুইতর্‌ফা হইলে সত্যনির্ণয় সহজ হয়। বিদেশী ঐতিহাসিক একভাবে সাক্ষী সাজাইবেন এবং স্বদেশী ঐতিহাসিক অন্যভাবে সাক্ষী সাজাইবেন— তাহাতে নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের কাজের সুবিধা হয়।

 যাহা হউক, বিদেশী-লিখিত ভারতবর্ষের ইতিহাসকে বিনা প্রশ্নে, বিনা বিচারে গ্রহণ ও মুখস্থ করিয়া, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া, ফাস্ট্‌প্রাইজ পাওয়া আমাদের গৌরবের বিষয় হইতেছে না। কোনো ইতিহাসই কোন কালে প্রশ্ন ও বিচারের অতীত হইতে পারে না। য়ুরোপীয় ইতিহাসেও

১১৮