পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

জাগ্রত হইয়া উঠে নাই তখন ভারতবর্ষের ইতিহাসকে আমরা বাহির হইতে দেখিতাম; তখন আমরা পাঠান-রাজত্বের ইতিহাস, মোগল-রাজত্বের ইতিহাস পাঠ করিতাম। এখন সেই মোগল-রাজত্ব পাঠান-রাজত্বের মধ্যে ভারতেরই ইতিহাস অনুসরণ করিতে চাহি। ঔদাসীন্য অথবা বিরাগের দ্বারা তাহা কখনো সাধ্য নহে। সেই সমগ্র ধারণা কেবল বিচার ও গবেষণার দ্বারাও হইতে পারে না; কল্পনা এবং সহানুভূতি আবশ্যক।

 বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলীকে এক করিতে ও মৃততথ্যগুলিতে জীবনসঞ্চার করিতে যখন কল্পনা ও সহানুভূতি নিতান্তই চাই তখন সে বিষয়ে আমরা পরের উপর নির্ভর করিলে চলিবে না। সংগ্রহকার্যে পরের সহায়তা লইতে আপত্তি নাই, কিন্তু সৃজনকার্যে আপনার শক্তি প্রয়োগ করিতে হইবে। ভারতবর্ষীয়ের দ্বারা ভারতবর্ষের ইতিহাস রচিত হইলে পক্ষপাতের আশঙ্কা আছে, কিন্তু পক্ষপাত অপেক্ষা বিদ্বেষে ও সহানুভূতির অভাবে ইতিহাসকে ঢের বেশি বিকৃত করে। তাহা ছাড়া এক দেশের আদর্শ লইয়া আর-এক দেশে খাটাইবার প্রবৃত্তি বিদেশীর লেখনীমুখে আপনি আসিয়া পড়ে, তাহাতেও শুভ হয় না।

হউক বা না-হউক, আমাদের ইতিহাসকে আমরা পরের হাত হইতে উদ্ধার করিব, আমাদের ভারতবর্ষকে আমরা স্বাধীন দৃষ্টিতে দেখিব, সেই আনন্দের দিন আসিয়াছে। আমাদের পাঠকবর্গকে লেথব্রিজ সাহেবের চটির মধ্য হইতে বাহির করিয়া ইতিহাসের উন্মুক্ত ক্ষেত্রের মধ্যে আনিয়া উপস্থিত করিব; এখানে তাঁহারা নিজের চেষ্টায় সত্যের সঙ্গে সঙ্গে যদি ভ্রমও সংগ্রহ করেন সেও আমাদের পক্ষে পর-লিখিত পরীক্ষাপুস্তকের মুখস্থ বিদ্যা অপেক্ষা অনেক গুণে শ্রেয়, কারণ, সেই স্বাধীন চেষ্টার উদ্যম আর একদিন সেই ভ্রম সংশোধন করিয়া দিবে। কিন্তু পরদত্ত চোখের ঠুলি

১৪০