পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

সরস সম্পূর্ণ চিত্র ছেলেদের মনে মুদ্রিত করিয়া দেওয়া উচিত। তবেই তাহারা বুঝিতে পারিবে ঐতিহাসিক হিসাবে ভারতবর্ষ জিনিসটা কী। এমন-কি আমরা বলি, ভারতবর্ষের ভূগোল ইতিহাস এবং সমস্ত বিবরণ জড়াইয়া শুদ্ধমাত্র ‘ভারতবর্ষ’ নাম দিয়া একখানি বই প্রথমে ছেলেদের পড়িতে দেওয়া উচিত। পরে ভারতবর্ষের ভূগোল ও ইতিহাস পৃথক ভাবে ও তন্ন-তন্ন-রূপে শিক্ষা দিবার সময় আসিবে। আমরা বোধ করি, ইংরাজিতে এরূপ গ্রন্থের বিস্তৃত আদর্শ সার উইলিয়ম হণ্টারের ‘ইণ্ডিয়ান এম্পায়ার’। এই সুসম্পূর্ণ সুন্দর পুস্তকটিকে যদি কোনো শিক্ষিত মহিলা শিশুদের অথবা তাহাদের পিতামাতাদের উপযোগী করিয়া বাংলায় রচনা করেন তবে বিস্তর উপকার হয়।

 কিন্তু টেক্সটবুক-কমিটির খাতিরে গ্রন্থকত্রী তাঁহার বইখানিকে যে সম্পূর্ণ নিজের মনের মতো করিয়া লিখিতে পারেন নাই তাহা বেশ বুঝা যায়। ইস্কুলে ছেলেদের যে-সকল সম্পূর্ণ অনাবশ্যক শুষ্ক তথ্য মুখস্থ করিতে দেওয়া হয় লেখিকা তাহার সকলগুলি বর্জন করিতে সাহসী হন নাই। আমরা ভরসা করিয়া বলিতে পারি যে, মোগল রাজত্বের পূর্বে তিন শত বৎসর -ব্যাপী কালরাত্রে ভারত-সিংহাসনে দাসবংশ হইতে লোদীবংশ পর্যন্ত পাঠান রাজন্যবর্গের যে রক্তবর্ণ উল্কাবৃষ্টি হইয়াছে তাহা আদ্যোপান্ত কাহারই বা মনে থাকে এবং মনে রাখিয়াই বা ফল কী? অন্তত, এ ইতিহাসে তাহার একটা মোটামুটি বর্ণনা থাকিলেই ভালো হইত। নীরস ইংরাজ-শাসন-কাল সম্বন্ধেও আমাদের এই মত।

 ছাত্রপাঠ্য গ্রন্থে আর্য-ইতিবৃত্তের তারিখ সম্বন্ধে মৌনাবলম্বনই শ্রেয়। ‘খৃষ্টজন্মের প্রায় ২০০০ বৎসর পূর্বে আর্যগণ উত্তরপশ্চিম দিক দিয়া ভারতবর্ষে প্রবেশ করিয়াছিলেন’ ‘ভারতবর্ষে আসিবার এক হাজার বৎসর

১৫৬