পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

শিবাজী ও গুরু গোবিন্দসিংহ

 যতদিন বিরুদ্ধপক্ষ প্রবল থাকাতে আত্মরক্ষার চেষ্টাই একান্ত হইয়া উঠে ততদিন এক বিপদের তাড়নায় নিজেদের মধ্যে ঐক্যবন্ধন দৃঢ় থাকে। বাহিরের সেই চাপ সরিয়া গেলে এই বিজয়মদমত্ততাকে কিসে ধারণ করিয়া রাখিতে পারে? আত্মরক্ষাচেষ্টায় যে যুদ্ধশক্তি সঞ্চিত হইয়া উঠে অন্যকে আঘাত করিবার উদ্যম হইতে নিবৃত্ত করিয়া নিজেকে গড়িয়া তুলিবার চেষ্টায় সেই শক্তিকে কে নিযুক্ত করিতে পারে?

 যে শক্তি তাহা পারিত আশু-প্রয়োজন-সাধনের অতিলোলুপতায় গুরু গোবিন্দ তাহাকে খর্ব করিয়াছিলেন। গুরুর পরিবর্তে তিনি শিখদিগকে তরবারি দান করিলেন। তিনি যখন চলিয়া গেলেন তখন নানকের প্রচারিত মহাসত্য গ্রন্থসাহেবের মধ্যে আবদ্ধ হইল, তাহা গুরুপরম্পরায় জীবনপ্রবাহে ধাবিত হইয়া মানবসমাজকে ফলবান্ করিবার জন্য অপ্রতিহত গতিতে সম্মুখে অগ্রসর হইতে থাকিল না; এক জায়গায় তাহা অবরুদ্ধ হইয়া গেল।

 শক্তি তখন দেখিতে দেখিতে লুব্ধ এবং অসংযত হইয়া উঠিল। তখন দেবতার তিরোধানে অপদেবতার প্রাদুর্ভাব হইল, কাড়াকাড়ি ও দলাদলি উদ্দাম হইয়া উঠিল।

 এই উচ্ছৃঙ্খল আত্মঘাতসাধনের মধ্যে রণজিৎসিংহের অভ্যুদয় হইল। তিনি কিছুদিনের জন্য বিচ্ছিন্ন শিখদিগকে এক করিয়াছিলেন, কিন্তু সে কেবলমাত্র বলের দ্বারা। তিনি সকলের চেয়ে বলশালী বলিয়া সকলকে দমন করিয়াছিলেন।

 বলের দ্বারা যে লোক এক করে সে অন্যকে দুর্বল করিয়াই এক করে; শুধু তাই নয়, ঐক্যের যে চিরন্তন মূলতত্ত্ব প্রেম তাহাকেই পরাস্ত করিয়া পঙ্গু করিয়া নিজের প্রয়োজন সাধন করে। রণজিৎসিংহ

৬৩