পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

 নানক তাঁহার শিষ্যদিগকে স্বার্থপরতা হইতে, ধর্মবোধের সংকীর্ণতা হইতে, আধ্যাত্মিক অসাড়তা হইতে মুক্ত হইবার জন্য আহ্বান করিয়াছিলেন তিনি তাহাদের মনুষ্যত্বকে বৃহদভাবে সার্থক করিতে চাহিয়াছিলেন। গুরুগোবিন্দ এই শিখদিগকে বিশেষ একটি প্রয়োজনের উপযোগী করিয়া বাঁধিয়া দিলেন, এবং যাহাতে তাহারা সেই প্রয়োজনকে কিছুতে বিস্মৃত না হয় সেইজন্য তাহাদের নামে বেশে ভূষায় আচারে নানা প্রকারে সেই প্রয়োজনটিকে তাহাদের চিত্তের মধ্যে বিশেষরূপে মুদ্রিত করিয়া দিলেন। এইরূপে শিখদের মনুষ্যত্বের উদ্যমধারাকে অন্য সকল দিক হইতে প্রতিহত করিয়া তিনি একটা বিশেষ দিকে প্রবাহিত করিলেন। ইহার দ্বারা একটা প্রয়োজনের ছাঁচের মধ্যে শিখ জাতি বদ্ধ হইয়া শক্ত হইয়া তৈরি হইল।

 যখন শিখেরা মুক্ত মানুষ না হইয়া বিশেষ প্রয়োজনযোগ্য মানুষ হইল তখন প্রবল রাজা তাহাদিগকে নিজের প্রয়োজনে লাগাইলেন এবং এইরূপে আজ পর্যন্তও তাহারা প্রবলকর্তৃক বিশেষ প্রয়োজনেই লাগিতেছে। স্পার্টায় গ্রীস যখন নিজের মানবত্বকে বিশেষ প্রয়োজনের অনুসারে সংকুচিত করিয়াছিল তখন সে যুদ্ধ করিতে পারিত বটে, কিন্তু আপনাকে খর্ব করিয়াছিল; কারণ, যুদ্ধ করিতে পারাই মানুষের শেষ লক্ষ্য নহে। এইরূপে মানুষ আশু প্রয়োজনের জন্য নিজের শ্রেয়কে নষ্ট করে এমন উদাহরণ অনেক আছে, এবং আজ পর্যন্ত এই অদূরদর্শী লুব্ধতার তাড়নায় সকল সমাজেই মনুষ্যবলি চলিতেছে। যে নররক্তপিপাসু অপদেবতা এই বলি গ্রহণ করে সে কখনো সমাজ, কখনো রাষ্ট্র, কখনো ধর্ম এবং কখনো তৎকালপ্রচলিত কোননা-একটা সর্বজনমোহকর নাম ধরিয়া মানুষকে নষ্ট করিয়া থাকে।

৬৬