পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

মত হইত তখন কোথা হইতে আর-একটা কাঠ আপনি জ্বলিয়া উঠিত।

 আমাদের দেশে বারম্বার ইহাই দেখা গিয়াছে যে, এখানে শক্তির উদ্ভব হয় কিন্তু তাহার ধারাবাহিকতা থাকে না। মহাপুরুষেরা আসেন এবং তাঁহারা চলিয়া যান— তাহাদের আবির্ভাবকে ধারণ করিবার, পালন করিবার, তাহাকে পূর্ণ পরিণত করিয়া তুলিবার স্বাভাবিক সুযোগ এখানে নাই।

 ইহার কারণ আমাদের বিচ্ছিন্নতা। যে মাটিতে আঠা একেবারেই নাই সেখানেও বায়ুর বেগে বা পাখির মুখে বীজ আসিয়া পড়ে, কিন্তু তাহা অঙ্কুরিত হয় না, অথবা দু-চারটি পাতা বাহির হইয়া মুষ্‌ড়িয়া যায়। কারণ, সেখানকার আলগা মাটি রস ধারণ করিয়া রাখিতে পারে না। আমাদের সমাজের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার আর অন্ত নাই; ধর্মে কর্মে, আহারে বিহারে, আদানে প্রদানে সর্বত্রই বিচ্ছিন্নতা। এইজন্য ভাবের বন্যা নামে, কিন্তু বালুর মধ্যে শুষিয়া যায়; তেজের স্ফুলিঙ্গ পড়ে, কিন্তু ইতস্তত সামান্য ধোওয়া জাগাইয়া নিবিয়া যায়। এইজন্য মহৎ চেষ্টা বৃহৎ চেষ্টা হইয়া উঠে না এবং মহাপুরুষ দেশের সর্বসাধারণের অক্ষমতাকে সমুজ্জ্বল ভাবে সপ্রমাণ করিয়া নির্বাণ লাভ করেন।


 যাহা হউক, মারাঠা ও শিখের অভ্যুত্থান ও পতনের কারণ সম্বন্ধে তুলনা করিয়া বলিতে হইলে এই বলা যায় যে, শিখ একদা একটি অত্যন্ত বৃহৎ ভাবের আহ্বানে একত্র হইয়াছিল– এমন একটি সত্যধর্মের বার্তা তাহারা শুনিয়াছিল যাহা কোনো স্থানবিশেষের চিরাগত প্রথার মধ্যে বদ্ধ নহে এবং যাহা কোনো সময়বিশেষের উত্তেজনা হইতে প্রসূত হয় নাই–

৭০